শিবির সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ৪ শিক্ষার্থীই নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ওই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোন প্রমাণাদি না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী বলেন, মঙ্গলবার এস এম হল থেকে শিবির সন্দেহে আটক শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রাতে তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলে শিবির সন্দেহে এই ৪ শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। দুপুর ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন করে ছাত্রলীগের নেতারা। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা হলো-আরিফ (সমাজকল্যাণ, ৪র্থ বর্ষ), মেহেদী (ফিন্যান্স, ৪র্থ বর্ষ), রাজু (ব্যাংকিং, ৩য় বর্ষ) এবং ইসমাইল (আইন, ৪র্থ বর্ষ)। এদের মধ্যে ইসমাইলকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করেন তাদের কাছে জিহাদী বই এবং মোবাইলে শাহবাগ নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ এসএমএস পাওয়া গেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন অভিযোগ পাননি।
হলের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক দিদারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তাদের কাছে জিহাদী বই এবং মোবাইলে শাহবাগ নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ এসএমএস পাওয়া যায়। উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদেরকে মারধর করা হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো ছিল তা প্রমাণিত হয়নি। ফলে তাদের তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মারধরের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা হল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। আমাদের কিছু করার নেই। তবে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞাকে বার বার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এরকম শুধু এসএমএস হলেই না বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রদল-শিবির সন্দেহে সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। ব্যক্তিগত আক্রোশকে শিবির বলে মারধর করে নিজেদের খায়েশ মিটানো হয়।
এর আগে গত ২০ নবেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলে ছাত্রদল অভিযোগে তিনজন নিরীহ সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধর করে হলের ছাত্রলীগ সেক্রেটারি আরেফিন সিদ্দিক সুজন। তাদের মধ্যে ২ জন শিক্ষার্থী এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসারত রয়েছেন। তাদের অপরাধ তারা হলে ছাত্রলীগের পদ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
এভাবে দিনের পর দিন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তারা ব্যবস্থা নিতে পারছেন না, না নিচ্ছেন না সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বোধগম্য নয়। এর প্রতিবাদ করার ভাষা ঢাবি প্রশাসন হারিয়ে ফেলেছে। প্রশাসন ছাত্রলীগের হাতে পণবন্দী হয়ে পড়েছে।