ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চাঁদার দাবিতে নির্মাণশ্রমিকদের মারধর করেন এবং সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক উল্টে দেন।ঠিকাদার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন ভবনগুলোর কাছ থেকে তাঁরা আগে থেকেই চাঁদা নিচ্ছিলেন। কিন্তু ঈদ সামনে রেখে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। ঠিকাদারেরা তা দিতে রাজি হননি। সর্বশেষ গত রোববার রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দিলে ঠিকাদারেরা শেখ হাসিনা ও সুফিয়া কামালের নামে নির্মীয়মাণ ছাত্রীহল ও প্রয়াত পরমাণুবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার নামে নির্মীয়মাণ বিজ্ঞানাগার ভবন এবং নতুন প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। ঠিকাদারদের সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান ওরফে জনি এবং রাজীব আহমেদের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা রোববার রাত ১২টার দিকে শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞানাগার ভবনে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। তাঁরা ওই স্থানে দায়িত্বরত শ্রমিক-কর্মচারীদের উদ্দেশে গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা শ্রমিকদের লাঠি ও রড দিয়ে পেটানো শুরু করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকেবলেন, যাঁরা চাঁদা চেয়েছেন তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মী কি না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলেননি। তবে কিছু যুবক রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করেছেন—এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় যে কেউ এখানে প্রবেশ করতে পারে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রক্টরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়ায় ঠিকাদারেরা কাজ শুরু করবেন।
গতকাল সোমবার ওই চারটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকতে দেখা যায়। প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন এসব ভবনে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তাঁরা কাজ শুরু করবেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে শেখ হাসিনা হলের ঠিকাদারি সংস্থা ঊর্মি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জামালউদ্দিন প্রথম আলোকেবলেন, রোববার রাতে কয়েকজন যুবক নির্মাণস্থলে এসে শ্রমিকদের মারধর করেন। তাঁরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারকে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাঁদা দিয়ে আসার জন্য বলেন। তাই নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।
ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকেবলেন, সম্প্রতি ছাত্রদলের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছেন। তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ছাত্রলীগের নাম নিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঠিকাদারদের বলা হয়েছে, কেউ ছাত্রলীগের নাম নিয়ে চাঁদা চাইলে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।
ঈদ চাঁদা: ঠিকাদার ও ছাত্রলীগের একটি অংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজান মাসের প্রথম দিন থেকেই ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পাসে নির্মীয়মাণ চারটি ভবনের ঠিকাদারদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ কোটি টাকার কাজ চলছে। শেখ হাসিনা হলের জন্য ১৬ কোটি টাকা, সুফিয়া কামাল হলের জন্য ১২ কোটি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের জন্য সাড়ে ১২ কোটি, প্রশাসনিক ভবনের জন্য নয় কোটি ও ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞানাগারের জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ছোটখাটো নির্মাণকাজও চলছে। আগস্টের মধ্যে হাসিনা হলের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চাঁদাবাজির কারণে এ পর্যন্ত তিনবার এর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৮০ কোটি টাকার নির্মাণকাজের ২ শতাংশ চাঁদা হিসেবে দাবি করে। কিন্তু ঠিকাদারেরা এর আগে ছাত্রলীগের কর্মীদের চাঁদা দিয়েছেন উল্লেখ করে আর চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান।