সিলেটের ছালিয়া এলাকায় গত সোমবার দুপুরে ৭২ শতক জমি দখল করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নামধারীরা গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এ সময় নগর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের সশস্ত্র দল ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯) ও পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করে সোমবার রাত পর্যন্ত দখল-তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ জনকে আটক করে। গতকাল মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে ওই ২২ জনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে, জমি দখলে যাওয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কোনোভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
গতকাল র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ও জনতার সহযোগিতায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো: দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির দুলাল, একই এলাকার ময়নুল হক, আবদুল মতিন, আবদুল মতলিব, রিপন মিয়া, আসলাম মিয়া, নগরের ভার্তখলার ফয়েজ, রাজারগলির জুহেন আবেদীন, একই এলাকার জিয়াউর রহমান, দাঁড়িয়াপাড়ার বদরুল, একই এলাকার জসিম উদ্দিন, আবেদ আলী, গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীর এনাম, একই উপজেলার দত্তরাই গ্রামের তুহিন, সদর উপজেলার মৌলভী গ্রামের মুক্তার আলী, একই এলাকার জসিম উদ্দিন, নগরের গুয়াইপাড়ার নুরুল, মাছুম আহমদ, রুবেল, সুন্দর আলী, মুক্তার আলী ও আসলাম খান। ঘটনাস্থল থেকে একটি দোনলা বন্দুক, একটি এক নলা বন্দুক ও দুটি এয়ারগান উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, দুপুর একটার দিকে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলযোগে বহিরাগত ৪০-৫০ জনের একটি দল এসে এলাকায় অবস্থান নেয়। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক পীযূষ কান্তি দেবসহ মদনমোহন কলেজ ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।
সিলেট শহরতলির ছালিয়া গ্রামে গতকাল সকালে গিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের ছালিয়া মৌজার ৩৫২ ও ৩৬২ নম্বর দাগে ৭২ শতক জায়গার মূল দলিল ছিল মজুমদারি এস্টেটের নামে। কিন্তু খরিদ সূত্রে এই জমির মালিক দাবিদার দুটি পক্ষ—দুবাই প্রবাসী আজমল হোসেন ও নগরের সুবিদবাজার এলাকার আবদুল মুহিত মুকুলের মধ্যে জায়গার মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সোমবার দুপুরে আবদুল মুহিতের পক্ষ জমি দখলের তৎপরতা চলছিল। এ ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও আবদুল মুহিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মুহিতের পক্ষে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ছালিয়ায় যাওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করে খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলোয়ার হোসেন জানান, সন্ত্রাসীরা জমি দখল করতে এসে প্রথমে গুলি চালায়। গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিহত করে। এ সময় তারা নিজেদের ছাত্রলীগ পরিচয় দেয়। কেউ কেউ আত্মরক্ষার্থে ‘ডিবি পুলিশ’ বলে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছলে গ্রামবাসী শান্ত হয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দখলদার পক্ষে ব্যবহূত তিনটি লেগুনা, ১১টি মোটরসাইকেল, একটি পিকআপ ভ্যান ও একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে রাস্তার পাশের খাদে ফেলে দেয়। এর মধ্যে একটি মাইক্রোবাস থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ওই মাইক্রোবাসসহ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে। সোমবার রাতে ওই এলাকায় র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ ছালিয়া গ্রামের তানিম আহমদ (১৬), আবুল মিয়া (৪০) ও সুমন আহমদ (২৪) এবং সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফ আহমদ, গ্রামবাসী আবরুর মিয়াসহ (৪০) সাতজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল প্রথম আলোকে জানান, এ ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আলিম বাদী হয়ে ২৬ জনকে আসামি করে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছেন। মামলায় র্যাব ও পুলিশের হাতে আটক ২২ জন এবং সুবিদবাজারের আবদুল মুহিত মুকুল ও ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পীযূষ কান্তি দেকে আসামি করা হয়েছে। ওসি জানান, বাকি চার আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন: সংবাদ সম্মেলনে নেতারা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করা হয়েছে দাবি করে বলেন, যারা আটক হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। জায়গা দখলের সঙ্গে ছাত্রলীগের যে কজনের নাম এসেছে, তারা অনেক আগেই ছাত্রলীগ ছেড়েছে। জায়গা দখলে পীযূষ কান্তির নেতৃত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, ‘তিনি (পীযূষ) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তাই তাঁর দখলে যাওয়া না-যাওয়া কোনোভাবে ছাত্রলীগের ওপর বর্তায় না।’ সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন খান, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার, নগর সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান বক্তব্য দেন।