আবারো সংবাদ শিরোনামে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। ছাত্রলীগ নামধারীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অস্থির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, পাবনাসহ দেশের বিাভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, সরকারি সম্পদ ধ্বংসসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদর্শিক এই ছাত্র সংগঠনটি।
গতকালের প্রকাশিত হয়েছে ছাত্রলীগের বেপরোয়া তাণ্ডব নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন। গত সোমবার সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ক্লাসরুমেই একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম খালেদ আহমদ লিটু। একইদিন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু আবাসিক হল ভাঙচুর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গ্রুপ। হলের আসন বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ক্যাম্পাসে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। দলীয় টেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে গত রোববার দরপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দুই দফা হামলায় আহত হয়েছেন ১০ জন। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ছাত্রলীগ কর্মী শান্তকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার ভোরে এমসি কলেজের হোস্টেলে ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। আগ্নেয়াস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল, রড, দা, হকিস্টিকসহ ছাত্রাবাসের ৪ ও ৫নং ব্লুক এবং শ্রীকান্ত ব্লুকে ভাঙচুর চালানো হয়।
এসব ঘটনায় স্পষ্ট যে, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের রাশ টানতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও অভিভাবক রাজনৈতিক দল। ছাত্রলীগের এসব সহিংসতার কারণ হিসেবে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তার, ভর্তি বাণিজ্য কিংবা দলীয় কোন্দলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো চিহ্নিত হওয়ার পরও কেন ছাত্রলীগের রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না এটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মূলত সরকারের আগের মেয়াদের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচিত ছিল ছাত্রলীগ। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর নানা পদক্ষেপের পরও লাগাম টানা সম্ভব হয়নি ছাত্রলীগের। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনটি দেখাশোনা করার জন্য ছাত্রলীগের এক সময়ের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু তাতে করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে নৌকাকে ডুবানোর জন্য ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট- এমন আলোচনা দলের মধ্যেই হচ্ছে। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে ¤øান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম। এটা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বুঝেন না তা নিশ্চয়ই নয়।
বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অপরাধী যে দলের পরিচয়ধারীই হোক তাকে ছাড় না দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের তাণ্ডব-সন্ত্রাস পুলিশ দেখেও দেখে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও তাদের ঘাঁটাতে চায় না। এভাবে তো চলবে না।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। অপরাধীর পরিচয় যাই হোক তাকে ছাড় দেয়া যাবে না- এটা যে কথার কথা নয় তার প্রমাণ দিতে হবে নিজেদের পদক্ষেপে। সরকারকেও তার ভাবমূর্তির স্বার্থেই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস মোকাবেলায় কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা চাই, ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক, খুনিরা উপযুক্ত শাস্তি পাক। সিলেট পাবনা রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থির শিক্ষাঙ্গনগুলোতে লেখাপড়ার উপযুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনা হোক দ্রুত।