বগুড়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তিনটি সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে বেপরোয়া ভর্তি বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অপেক্ষমাণ তালিকার সব ফরম নেতাদের হাতে। টাকা ছাড়া কেউ ভর্তি হতে পাড়ছেন না। কোনো কোনো কলেজে অধ্যক্ষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে ছাত্রলীগের নেতা ও অধ্যক্ষরা দাবি করেছেন, যেহেতু ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে ও সিওর ক্যাশে পরিশোধের মাধ্যমে হয়; তাই এখানে বাণিজ্য করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিপক্ষের কেউ ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগ বৃহস্পতিবার সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজ কমিটি বিলুপ্ত ও অন্য কলেজের নেতাদের সতর্ক করেছে।
জানা গেছে, চলতি ১৬ জুন থেকে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মেধাতালিকায় ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। অপেক্ষমাণ তালিকার ভর্তি শুরু হলেই সরকারি শাহ্ সুলতান, সরকারি মজিবর রহমান মহিলা কলেজ ও বগুড়া সরকারি কলেজে (সাবেক বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয়) ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতারা ভর্তি বাণিজ্য লিপ্ত হন। ভর্তি ফরমগুলো তাদের হাতে। নেতারা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার কমে কাউকে ভর্তি হতে দিচ্ছে না। কোনো কোনো অধ্যক্ষ নেতাদের এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, বগুড়া সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ নেতা নামধারী আল-আমিন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভর্তি বাণিজ্য করেন। বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে গিয়ে অফিসে ঢুকতে পারেননি। নেতারা ভর্তির তারিখ পেরিয়ে গেছেসহ নানা অজুহাতে তাদের অফিসে ঢুকতে দেননি। ভর্তির বিনিময়ে তাদের কাছে ৬-৭ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বগুড়ার শিবগঞ্জের আমতলি গ্রামের ছাত্রী সীমা খাতুন (সিরিয়াল নং-৩৫৮, বিজ্ঞান) ভর্তি হওয়ার জন্য বড় বোনের সঙ্গে কলেজে আসেন। সেখানে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অফিস রুমে ঢুকতে দেননি। ছাত্রীর বোন অভিযোগ করেন, নেতারা তাদের কাছে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে গেলে তাকে বিকাল ৪টার দিকে ভর্তির জন্য আসতে বলা হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নুরুন্নবী তার কলেজে ভর্তি বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, ১৮ জুন থেকে ভর্তি শুরু হয়েছে; কেউ তার কাছে এমন অভিযোগ করেননি। তিনি নিজেও এর সঙ্গে জড়িত নন।
সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা অপেক্ষমান তালিকার সব ভর্তি ফরম নিজের কাছে রেখেছেন। তিনি বা তার প্রতিনিধিকে ২০ হাজার টাকা না দিলে কেউ ভর্তি হতে পারছেন না। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ১২৫০ আসনের এ কলেজে গত ২৪ জুন ভর্তি শুরু হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর এজাজুল হক জানান, তার কলেজে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তি হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতার ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ তিনি পাননি। কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভর্তির কথা অস্বীকার করে বলেন, এখন ভর্তি অনলাইনে এবং টাকা সিওর ক্যাশের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। ভর্তি নিয়ন্ত্রণ করছেন কলেজের শিক্ষক পরিষদ। তাই ভর্তি বাণিজ্যের সুযোগ নেই। প্রতিপক্ষের লোকজন মিথ্যাচার করছেন।
অপরদিকে সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি আঞ্জুমান আরা, সাধারণ সম্পাদক রত্না সরকার, যুগ্ম সম্পাদক রুকাইয়া সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমি খাতুন প্রমুখ নেত্রী ব্যাপক ভর্তি বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ
উঠেছে। তাদের টাকা না দিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। নেত্রীরা সাংবাদিকদের কাছে ভর্তি বাণিজ্যের কথা স্বীকার করে বলেন, শুধু তারা নন; তাদের সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরাও টাকা নিচ্ছেন।