জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বিতীয় দফায় প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে ৬ শিক্ষার্থী আটক হবার পর ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: জাহেদুল কবীর জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ডি-ইউনিটের পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের হাতে আটক হয়েছেন ৬ জন।
আটককৃতরা হলেন, সোহেল রানা, নাজমুজ সাকিব, মো: আতিক, মাহবুবুর রহমান মনির, সাকিবুর রহমান এবং ফরিদ আলম। এরা সবাই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী।
এর আগে ২১ নভেম্বর বি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে আটক হয়েছেন আরো ২ জন। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল জব্বার ও অমিত হাসান রিপন।
তিনি আরো বলেন, ভর্তি বাণিজ্যের এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিপন চৌধুরী জড়িত সন্দেহে তাকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিপন চৌধুরী বলেন, আমাকে অন্য কারণে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পরে আমি চলে এসেছি। প্রমাণ পেলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক নেতার ছাত্রলীগের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য হয়েছে। তারা বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধাবী ছাত্রদের ভাড়া করে প্রক্সি পরীক্ষা দিয়ে, এক সিরিয়ালে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে এবং প্রশ্ন ফাঁস করে বিভিন্ন কায়দায় এ ভর্তি বাণিজ্য পরিচালনা করে। যদিও তারা ভর্তি পরীক্ষার আগে ভর্তি বাণিজ্য করবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নোটিশ করেছিল সাধারণ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ছাত্রলীগ কোন ধরনের ভর্তি বাণিজ্যের সাথে জড়িত নয়। তবে শুনেছি রাতের বেলায় অনেক শিক্ষার্থীকে কে বা কারা বাসে করে ঢাকা, মধুপুর ও ময়মনসিংহ নিয়ে গেছে এবং সকালে তাদের নিয়ে এসেছে। আরো শুনেছি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে খোজঁ নিয়ে জেনেছি এটা গুজব। আর যারা আটক হয়েছে তাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোন সর্ম্পক নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো: জাহিদুল কবীর বলেন, আটককৃতদের পুলিশের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে সোর্পদ করা হয়েছে। তিনি জানান, যারা প্রক্সি দিতে এসেছে, তাদের মদদ দেয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করছি। তবে কোন প্রমাণ পাইনি। ছাত্রলীগ জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রমাণ ছাড়া কিছু বলা যাবে না।
উল্লেখ্য ডি- ইউনিটে ৭ টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগগুলো হল, অর্থনীতি বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালন বিদ্যা বিভাগ, ফোকলোর বিভাগ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ, স্থানীয় সরকার এবং নগর উন্নয়ন বিভাগ। ডি- ইউনিটে মোট ৪২০ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছিল ১৪ হাজার ৫৪৭টি।