নীলফামারী সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের উত্তর চওড়া বড়গাছা স্কুল অ্যান্ড কলেজে অফিস সহকারী পদে লোক নিয়োগকে কেন্দ্র করে নিয়োগ-বাণিজ্য ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে গতকাল বুধবার পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তাঁর অপসারণের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে ওই কলেজের সামনের সড়কে এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। এতে বক্তব্য দেন চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাসেদ আল মামুন, ব্যবসায়ী শফিক আল ওয়াজান, শিক্ষক নিয়ামুল বসির প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন শহিদুল। তিনি শিক্ষক নিয়োগের নামে বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করছেন। সর্বশেষ তাঁর প্রতারণার শিকার হন চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন। প্রতিষ্ঠানটিতে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে অধ্যক্ষ তাঁর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন। অথচ তাঁকে চাকরি না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করছেন।
অপরদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সমাবেশে বক্তব্য দেন বিদ্যালয় শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সদস্যসচিব খোকারাম রায়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুধীর রায়, সদর উপজেলা সভাপতি উত্তম কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক তিমির কুমার বর্মণ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনোয়ার গত মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ চত্বরে ঢুকে অধ্যক্ষ শহিদুলকে মারধর করেন। বক্তারা দোষী ছাত্রলীগ নেতাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
অধ্যক্ষ শহিদুল বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ চত্বরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন মনোয়ার। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালান তিনি। আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় হত্যার চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গতকাল সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
অভিযুক্ত মনোয়ার বলেন, ‘ওই কলেজের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে লোক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমি আবেদন করি। লিখিত পরীক্ষা হয় ২১ জুন। আমাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষের সঙ্গে ১৬ লাখ টাকার চুক্তি হয়। আমি তাঁকে (অধ্যক্ষ) ১৫ লাখ টাকা দিই। ৪ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে ওই পদে দিনাজপুরের প্রশান্ত নামের একজনকে ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন। এ অবস্থায় মঙ্গলবার আমি টাকা ফেরত চাইলে আমাকে কলেজ চত্বর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন অধ্যক্ষ। এ সময় উভয়য়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। মারডাঙ্গের অভিযোগ সত্য না।’
তবে অধ্যক্ষ শহিদুল বলেন, ২১ জুন নিয়োগ পরীক্ষায় ১৬ জন অংশ নেন। গত ৪ জুলাই ফলাফল ঘোষণা করা হলে প্রশান্ত প্রথম হন। বিকেলে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করে। মনোয়ারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সদর থানার ওসি বাবুল আকতার বলেন, অধ্যক্ষ শহিদুল একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।