গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু বিগত কয়েকটি নির্বাহী সংসদ চার বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছে। সেই ধারাবাহিকতার দিকে এগোচ্ছে বর্তমান সংসদও। নতুন নির্বাহী সংসদের মেয়াদ আছে আর দুই মাস, অথচ এখনো প্রায় ৮০টির বেশি জেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব জেলার নতুন কমিটি গঠনের পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সম্মেলন করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে এ নির্বাহী সংসদ আরো অনেকটা সময় দায়িত্বে থাকবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কর্মী সংগ্রহ, কমিটি গঠন (থানা ও জেলা), গণতন্ত্রচর্চা এবং গঠনতন্ত্রে নির্দেশিত বিষয়কে পাত্তাই দিচ্ছে না ছাত্রলীগ। ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদেও নেই গণতন্ত্রের চর্চা। কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই সর্বেসর্বা। কমিটি গঠন ও সংগঠনের আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ডে সহসভাপতি, সাংগঠনিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের কোনো পরামর্শ পাত্তা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ নেতারা কোন্দলে জড়াচ্ছেন। গত দুই বছরে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার কিংবা শিক্ষাবান্ধব কোনো কর্মসূচি নেয়নি। জাতীয় দিবসগুলোতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়া তেমন কোনো কাজ থাকে না নেতাকর্মীদের!
২০১৫ সালের ২৫-২৬ জুলাই সম্মেলনে বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সোহাগ-জাকির প্যানেল নির্বাচিত হয়। এর সাত মাস পর ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই এ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। কমিটি পূর্ণাঙ্গের সময় অভিযোগ ওঠে বহিষ্কৃত, হত্যা মামলার আসামি, ইয়াবা কারবারি ও অপহরণকারীদের পদ দেওয়ার। অথচ অনেকেই সক্রিয় থাকার পরও পদ পাননি।
সূত্র জানায়, নব্বইয়ের দশকের আগে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়মের মধ্যেই হয়েছে; যদিও কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল। সর্বশেষ ১৯৯২-১৯৯৪ সালে মাঈনদ্দিন হাসান চৌধুরী ও ইকবালুর রহমান কমিটি দুই বছরের মধ্যেই নতুন কমিটি গঠন করে। এরপর পাঁচটি কমিটি চার বছর করে দায়িত্ব পালন করেছে। সর্বশেষ বদিউজ্জামান সোহাগ-সিদ্দিকী নাজমুল আলম কমিটি ২০১১-২০১৫, মাহমুদ হাসান রিপন-মাহফুজুল হায়দার রোটন কমিটি ২০০৬-২০১১, লিয়াকত সিকদার ও নজরুল ইসলাম বাবু কমিটি ২০০২-২০০৬, বাহাদুর বেপারী ও অজয় কর খোকন কমিটি ১৯৯৮-২০০২, এ কে এম এনামুল হক শামীম ও ইসহাক আলী খাঁ পান্না কমিটি ১৯৯৪-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিল।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, প্রতি দুই মাসে অন্তত একবার কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা হবে। এর বাইরেও প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভা, বিষয়সূচি নির্ধারণ ও আলোচনা এবং দুই মাস পর পর সম্পাদকমণ্ডলী নিজ নিজ কাজের ফিরিস্তি নির্বাহী সংসদের কাছে লিখিতভাবে জানাবেন ও পরবর্তী কর্মসূচি বা কার্যক্রম বিষয়ে পরিকল্পনা করবেন। বর্তমান পূর্ণাঙ্গ কমিটির দুই বছর পূর্ণ হতে চললেও নির্বাহী সংসদের সম্পাদকরা এখনো দায়িত্ব বুঝে পাননি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছের বিবেচিত ব্যক্তিদের দিয়ে সংগঠনের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দপ্তর, প্রচার, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক কেবল দায়িত্ব পালন করছেন।
ছাত্রলীগের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সব জেলা ইউনিট নিয়ে বর্ধিত সভা হয়েছে একটি। এর বাইরে দেশব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে একটি আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিষয়ে দুটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সর্বশেষ সিলেটে জঙ্গি আস্তানা পাওয়ার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি। প্রতি দুই মাসে একটি সভা হওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করতে পারেনি সংগঠনটি। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধারণ সভা করেছি। হ্যাঁ সেখানে সবাই উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে নির্বাহী সংসদের সবাইকে জানানো হয়েছিল।’
গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনূর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রী প্রাথমিক সদস্য হতে পারবে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এই সদস্য পদ নবায়ন বাঞ্ছনীয়। (খ) ধারায় বলা হয়েছে, স্ব স্ব সাংগঠনিক ইউনিটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নির্ধারিত সদস্যভুক্তির নিয়ম অনুযায়ী শপথপত্রে স্বাক্ষর করে সদস্য পদ গ্রহণ করতে হবে। (গ) ধারায় বলা হয়েছে, বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকরিতে নিয়োজিত কোনো ছাত্র ও ছাত্রী ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবে না। অথচ বর্তমান কমিটিতে কয়েকজন বিবাহিত নেতা থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। কোনো ইউনিটের পদধারী নেতা ছাড়া আর কারো সাংগঠনিক পরিচয় নেই। সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত হলেও গঠনতন্ত্র নির্দেশিত সদস্য ফরম তাঁরা পূরণ করেননি। সভা, সমাবেশ কিংবা মিছিলে যোগ দিয়েই কর্মী হওয়া যায়। কাজেই কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়ালে তখন তারা ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে দায় এড়ায় সংগঠনটি।
২০১৫ সালের ১৮ জুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। আর এর মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে ২০১৬ সালের ২১ মে ২০১ সদস্যের কমিটি হয়, যা গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। গঠনতন্ত্রের ১০(খ) ধারায় বলা হয়েছে, জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে।
গঠনতন্ত্রের ১৫(খ) ধারায় বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থায় অন্তত সাত দিন ও সাধারণ অবস্থায় অবস্থায় ১৫ দিনের নোটিশে কেন্দ্রীয় কমিটির সভা হবে। এই সভায় এক-তৃতীয়াংশের উপস্থিতিতে কোরাম হবে। (গ) ধারায় বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা ও সাধারণ অবস্থায় সাত দিনের নোটিশে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভা হবে। (ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতি দুই মাসে অন্তত একবার কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভা বসবে। অন্য শাখাগুলোতে প্রতি মাসে অন্তত একবার নির্বাহী সংসদের সভা হবে। গঠনতন্ত্রে থাকলেও বাস্তবে এসবের কোনো খবর নেই ক্ষমতাসীন এই সংগঠনটিতে।
গঠণতন্ত্রের ২৩ নম্বর বিবিধ ধারার (খ)-তে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের প্রত্যেক সদস্য মাসিক ২০ টাকা, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রত্যেক সদস্য ১৫, জেলা কমিটির প্রত্যেক সদস্য ১০ ও নিম্নতম কমিটির সদস্যরা মাসিক পাঁচ টাকা হারে চাঁদা প্রদান করবেন। কোনো সদস্যের পর পর তিন মাস চাঁদা বাকি থাকলে সেই সদস্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কমিটি ব্যবস্থা নেবে। চাঁদা, এককালীন অনুদান, সদস্য ফি, ছাত্রলীগ কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন পুস্তিকা বিক্রি করে সংগঠনের তহবিল গঠিত হয়। নির্ধারিত রসিদে প্রত্যেক শাখারই অর্থ সংগ্রহের ক্ষমতা আছে। অর্থ জালিয়াতির দায়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কারেরও বিধান আছে। বর্তমানে ছাত্রলীগে চাঁদা আদায়ের কার্যক্রম নেই।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অর্থ সম্পাদক আব্দুল মালেক কালের কণ্ঠকে বলেন, চাঁদা আদায়ের বিষয়টি এখনো শুরু হয়নি। তবে খুব দ্রুতই শুরু হবে। কমিটির মেয়াদ শেষ হতে চললেও কেউ চাঁদা দেয়নি।
সদস্য ফরম : কোনো অপকর্মের দায় ও ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে চার বছর আগে ২০১২ সালে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল সংগঠনটি। সারা দেশের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কর্মীদের পরিচয় দিতে প্রাথমিক সদস্য হওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। সোহাগ-নাজমুল কমিটি ঘটা করে এর উদ্বোধন করলেও চার বছরে এর বাস্তবায়ন হয়নি। প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকায় কোনো কর্মী বা নেতা অপকর্মে জড়িত থাকলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দায় অস্বীকারের ঘটনা নিত্যদিনের।
ছাত্র অধিকার : ছাত্রসংগঠন হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো অধিকার নিয়ে রাজপথে আসেনি ছাত্রলীগ। যদিও সম্প্রতি নানা ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশব্যাপী আন্দোলন হলেও রাজপথে আসেনি সংগঠনটি। মেট্রো রেল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যায় সারা দেশে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও কোনো কর্মসূচিতে ছিল না ছাত্রলীগ। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও মাঠে নামেনি সংগঠনটি। সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কয়েক ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল সংগঠনটি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহীতে কোন্দল : আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনটির বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নেতাকর্মীরা কোন্দল ও কলহে জড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় সহসভাপতির বক্তব্যের সূত্রে তাঁকে কারণ দর্শানোর পর আর কেউ মুখ খুলছে না। সম্প্রতি কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস সাংগঠনিক কোন্দল আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পহেলা বৈশাখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো দাওয়াত কার্ড না পৌঁছানোয় এবং ‘মূল্যায়ন হয় না’ এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্যরা। গত ডিসেম্বরে সংগঠনটির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় ‘ক্ষুব্ধ’ প্রতিক্রিয়া দেখান কেন্দ্রীয় নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নেতাদের দাবি, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কোনো নেতারই মূল্যায়ন নেই। নির্বাহী সংসদের জুনিয়র ও জেলার নেতারা সিনিয়রদের মূল্যায়ন করেন না। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী পরিচয় দিয়ে সিনিয়রদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সাধারণ সভা হয়নি। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে সাংগঠনিক দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন জেলা কমিটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
নেতাদের দাবি, এই দায়িত্ব নামমাত্র। কারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোনো মতামত কিংবা পরামর্শ নেওয়া হয় না। তাঁদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই মাস পর পর সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। থানা ও জেলা কমিটি গঠনে নির্বাহী সংসদের মতামত নেওয়া হয় না। ফলে জেলা ও থানা কমিটির নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কাউকে পাত্তা দেন না। রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও অনেকে বাদ পড়েছেন। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় হলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছের বিবেচনায় অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে।
সহসভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে দলীয় নেত্রী ছাত্রলীগ নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠালেও আমরা কেউ পাইনি। এর উত্তর জানি না। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
নির্বাহী সংসদের এক সহসভাপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ একটি নিয়মের মধ্যে চলে। নিজস্ব একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। অথচ এই গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনই নিয়মে পরিণত করেছে ছাত্রলীগ। শীর্ষ নেতারা বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। নির্বাহী সংসদ গঠনের পর এখন পর্যন্ত একটি সাধারণ সভাও হয়নি।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংগঠনের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাহী সংসদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা মতামত নেওয়া হয় না। ছাত্রলীগে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। নির্বাহী সংসদের মতামত ছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এতে কার্যত সংসদের অন্য নেতাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। অলংকারিক পদ দেওয়া হয়েছে মাত্র। সংগঠনকে গতিশীল করতে কেন্দ্রীয় নেতারা কিভাবে কাজ করবেন কিংবা নেতাদের কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়েও কোনো পদক্ষেপ নেই। জেলা কমিটি দেখভালে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার মতামত নেওয়া হয় না। নামমাত্র দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। একটি সংগঠনকে গতিশীল করতে সবাইকে একসঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে।’
গাছ লাগানোর ঘোষণা : গত বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সারা দেশে ১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছিল সংগঠনটি। দু-একটি প্রতিষ্ঠানে কিছু গাছ লাগানো ছাড়া আর কোথাও সে কর্মসূচির বাস্তবায়ন নেই। এই বিষয়েও সমালোচনা চলছে সংগঠনের মধ্যে।
দেশব্যাপী নিরক্ষরতামুক্ত কর্মসূচি : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত জানুয়ারিতে দেশব্যাপী নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি জেলাপর্যায়ে ‘সাক্ষরতার আলো’ শিরোনামে কর্মসূচি বাস্তবায়নে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ও গঠনতন্ত্র মেনেই ছাত্রলীগ চলছে। তবে সব ক্ষেত্রে তা মেনে চলা সম্ভব হয় না। অনেক বড় সংগঠন। কিছু ভুলভ্রান্তি হয়। পরবর্তী সময় আমরা বসে ঠিক করে নেব।’
গঠনতন্ত্র নির্দেশিত নিয়মিত সভা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মতামত নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিকভাবেই সভা করি। এরই মধ্যে অন্তত তিনটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় সংসদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, সভা হয় না—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সবাইকে জানানো হয়। অনেকে আসেন না। পার্টি অফিসে যাঁরা থাকেন, তাঁদের নিয়েও সভা করা হয়। ছাত্রদের অধিকার নিয়েই ছাত্রলীগ কাজ করছে।’