অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সজিবুল ইসলাম সজিবের বিরুদ্ধে এবার অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার অভিযোগ উঠেছে। সজিবের সেই অস্ত্র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিসিএস ক্যাডার থেকে শুরু করে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের পেছনের নির্জন স্থানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার ছবি প্রকাশ হয়ে গেলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ছবিগুলোতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষক এবং এক বিসিএস ক্যাডারকেও আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে। সজিবের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক ব্যবসারও অভিযোগ এখন সবার মুখে মুখে। সূত্রমতে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সজিবুল ইসলাম সজিব ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন নির্জন স্থানসহ কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছেন। নিজে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতা পরিচয়ের কারণে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতদিন সজিবের অস্ত্র ব্যবসা ও প্রশিক্ষণের বিষয়টি সবার মুখে মুখে থাকলেও সম্প্রতি তার অস্ত্র প্রশিক্ষণের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ছবি প্রকাশ হয়ে গেছে। প্রকাশ হওয়া একটি ছবিতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা সজিবের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষক মতিয়ার রহমান। তিনি বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এই ছাত্রলীগ নেতার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। এ ধরনের আরও একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সজিবের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সফলতার সঙ্গে নাইন এম এম পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষক আজিজুর রহমান মামুন। বর্তমানে তিনি বিসিএস ক্যাডার (ইকোনমি) পদে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে পাস করা এই সাবেক ছাত্রনেতার বাড়ি গাজীপুর জেলায়। তিনি ৩২তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশিক্ষণরত রয়েছেন বলে জানা গেছে। ছবিগুলোতে সজিবের অস্ত্র বাহক ছাত্রলীগ কর্মী সালাউদ্দিনকেও দেখা গেছে। সে ইবির আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক মতিয়ার রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে ঘটনা অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বলেন, ‘ওটা তো খেলনা পিস্তল। ছোট বাচ্চারা এ ধরনের পিস্তল নিয়ে খেলাধুলা করে। আমিও সজিবের সঙ্গে খেলনা পিস্তল দেখছিলাম।’ তবে বিসিএস ক্যাডার আজিজুল হক মামুনের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ছাত্রলীগ নেতা সজিব ক্যাম্পাসে পিস্তল সজিব নামে পরিচিত। কুষ্টিয়া শহরের আদর্শপাড়া এলাকার মৃত নূরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে তিনি। তার মা মমতাজ বেগম সোনালী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার একজন কর্মচারী। সজিব ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগে ভর্তি হন। বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আট বছর আগে ওই বিভাগে ভর্তি হলেও সজিব বারবার ফেল করার কারণে এখনো দ্বিতীয় বর্ষের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সিনেমার নায়ক স্টাইলে ছাত্রদল কর্মীদের ওপর গুলি ছুড়ে প্রথমে পত্রিকার শিরোনাম হন এই সজিব। এর পর ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীর-তুহিন কমিটি বিলুপ্ত হলে হঠাৎ করেই ক্যাডার থেকে নেতা বনে যান এই নেতা। পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার পুরস্কার হিসেবেই এই পদ পান বলে ক্যাম্পাসে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রতিটি সংঘর্ষে নতুন নতুন অস্ত্রের প্রদর্শনী করতে দেখা যায় তাকে। জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা সজিব ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে টিন দিয়ে ঘেরা নির্মাণাধীন দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের অভ্যন্তরে এবং মেডিকেল সেন্টারের পেছনে লেকের ঝোপঝাড়ে প্রায়ই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। ক্লাস চলাকালে কিংবা বিকালের নির্জন সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি ক্যাম্পাসে ওপেন সিক্রেট বলে জানা গেছে। প্রায়ই এসব স্থান থেকে গুলির শব্দ কানে ভেসে আসে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা সজিবুল ইসলাম সজিব বলেন, অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদানের কোনো ছবি যদি সাংবাদিকদের কাছে থাকে তাহলে এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।