হত্যা করে পার পেয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে একের পর এক ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গত দেড় বছরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগের তিন নেতা। দলীয় কোন্দল ও পুলিশের স্বদিচ্ছার অভাবেই কোন হত্যাকাণ্ডের কূল কিনারা করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
২০১৬ সালের ২৯শে মার্চ চট্টগ্রাম মহানগরীর বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুরিকাঘাতে খুন হন ছাত্রলীগের নগর কমিটির কার্যকরী সদস্য নাছিম আহমেদ সোহেল। সিসিটিভি ক্যামেরায় সোহান নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করতে দেখা গেলেও দীর্ঘদিনেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। একই বছর ২০শে নভেম্বর নিজের বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রথম ময়না তদন্তে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও দিয়াজের মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয়বার লাশ পুন: ময়না তদন্তে হত্যার আলামত পান চিকিৎসকরা। সবশেষ ৬ই অক্টোবর বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকার কারণে বারবার হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘এমন কোন শক্তি আছে যারা সোহেল, সুদীপ্ত হত্যাকারীদের লালন-পালন করছে। তারা কখনও রাজনৈতিক শক্তি হতে পারে না তারা অশুভ শক্তি।
দলীয় অন্ত:কোন্দল ও পুলিশের স্বদিচ্ছার অভাবেই কোন হত্যাকান্ডেরই কুল কিনারা করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ নিহত পরিবারের স্বজনদের।
নিহত দিয়াজের বোন অভিযোগ করেন, দিয়াজের হত্যাকারী আলমগীর টিপু সিআরবি হত্যা মামলার আসামী তারপরও সে প্রকাশ্যেই ঘুরাঘুরি করে। অপরদিকে সোহেলের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, যারা সোহেলকে হত্যা করল তারা গ্রেফতার হয় নি। তারা প্রশাসন নাকি রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতা পাচ্ছে আমরা বলতে পারব না। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে চলাফেরা করে এবং যারা সাক্ষি দিয়েছে তাদের নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
ছাত্র রাজনীতি সঠিকভাবে পরিচালিত না হত্তয়া ও দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে সুকৌশলে এ হত্যাকাণ্ড গুলো ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ মহানগর আত্তয়ামী লীগের নেতাদের।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘অনৈতিক কাজের প্রশ্রয় দিতে গিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভেদ তৈরি হচ্ছে যার কারণে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ঘৃণিতভাবে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আত্তয়ামীলীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন,
আর মহানগর পুলিশের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বরাবরের মত আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেন।
সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘আমরা আশাবাদী প্রমাণ নিয়ে খুব দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’
গত ৫ বছরে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নিহত হয়েছে ৯ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী তাপস হত্যার চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া সিআরবির ডবল মার্ডারের ছাত্রলীগ নেতা কর্মীসহ ৬২ জনকে আসামী করে পুলিশ চার্জশীট দিলেও আদালত তা আমলে না নিয়ে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।