সংঘর্ষ এড়ানোর লক্ষ্যে ছাত্রলীগ লুকোচুরির মধ্য দিয়ে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, অস্ত্রবাজ, বোমাবাজ, বিবাহিত, ব্যবসায়ী, বয়স চুরিতে অভিযুক্ত, ও সন্ত্রাসীদের ২৪ জুলাই ২০০৬ রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ মাধ্যমকে না জানিয়ে গোপন চিঠির মাধ্যমে অযোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যোগ্য, মেধাবীদের কমিটিতে স্থান দেয়ার কথা থাকলেও বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে এ কমিটিতে স্থান দেয়া হয়। এ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত সফলতার মুখ দেখেনি। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নতুন ডাইমেনশন আনার চেষ্টা করা হলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। গতানুগতিক ধারায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্রলীগের অনেকে অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে ও সাবেক এক শীর্ষনেতার তদবিরে অনেক অপরিচিত মুখ এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। তাদের অনেকের ছাত্রত্বও নেই। যারা কাউন্সিলদের ২০ ভাগ ভোট পায়নি তাদের রাখা হয়েছে কমিটিতে।
৪ ও ৫ এপ্রিল ২০০৬ বোমাবর্ষণ, গুলীবিনিময়ে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া নানা অভিযোগে শেখ হাসিনার হাতে জমা পড়ায় তিনি কমিটিকে আটকে দেন। অভিযোগ উঠে যারা পদ পেয়েছেন তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত ছিলেন। লালবাগ থানার সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ও ঘোষিত কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাসিবুর রহমান মানিক বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক ছিলেন। সে লালবাগ এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া কবির বিবাহিত, সহ-সভাপতি মাসুদের শুক্রাবাদে ফোন-ফ্যাক্সের দোকান ছিল, সে বিবাহিত, যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জুতার ব্যবসায়ী, সে গাড়ি চুরি ঘটনায় ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক সোহলে রানা মিন্টু ডালের ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া ছিনতাই, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ হিসেবে ইতিমধ্যে সে পরিচিতি লাভ করেছে। সহ-সভাপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কামরুল হাসান লিপনের বিরুদ্ধে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ আছে। সাহিত্য সম্পাদক মনসুরুল হক বাবু ইন্টারমিডিয়েট পাস, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি শামীমের চাচাতো ভাই। যুগ্ম সম্পাদক মিজান ২০০০ সালে শিক্ষা ভবনে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। তখন পত্র-পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল এসএম হলের হাদী নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলী করে হত্যা করার চেষ্টা করে। তাকে ছাত্রলীগ থেকে সে সময় আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া সহ-সভাপতি জামালপুরের বাবু, খুলনার হিটলু, মশিউর, অর্থ সম্পাদক তোফায়েল, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক সোহাগ, দিনাজপুরের ফেরদৌস মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ কমিটিতে স্থান পায়। ২০০৫ সালের মাঠ কাঁপানো অনেক নেতা-কর্মী কমিটিতে স্থান পায়নি। এরা হলো- মেহেরুল হাসান সোহেল, আবু সাঈদ, গাফফারি রাসেল, মনির হোসেন, দুলোন, শহিদুল্লাহ, সাহানুল, আকাশ, তারেক। ২৫ জুলাই ২০০৬ রাতে এ কমিটির চিঠি আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়া হয়। সেই রাতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নীলক্ষেত, শাহবাগ, ধানমন্ডি বিভিন্নস্থানে মাইক্রোবাসে করে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দেন।
শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি ছাত্রলীগের মূল নীতি। কিন্তু রাজশাহী মহানগর, জেলা ও উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাদের নামের সঙ্গে আলোচিত হয় মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, লুট- এই ক’টি শব্দ। কেবল পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, ছাত্রলীগের বিবদমান নেতারাই পরস্পরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলছেন, সংবাদ সম্মেলনও করছেন। এসব ঘটনায় পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এবং তদন্ত কমিটিগুলো রিপোর্ট প্রদান করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আস্কারায় লাগামহীন পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। কোনোভাবেই যেন আর নিয়ন্ত্রণে আসছে না এই সংগঠনটির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি, ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও ছাত্রী-শিক্ষক লাঞ্ছনার মতো ঘটনা ঘটার পরও পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ছাত্রলীগ যেন লাগামহীন হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৩টি, ২০১০ সালে ২৯টি, ২০১১ সালে ২১টি, ২০১২ সালে ২০টি এবং ২০১৩ সালে ১০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে আরও বেশ কয়েকটি ছোট-খাটো সংঘর্ষ ঘটেছে। (সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। লাশ পড়ে, রক্ত ঝরে। বাবা-মার বুক খালি হয়। মামলা হয়, তদন্তও হয়। কিন্তু কোনো ঘটনারই বিচার কাজ শেষ হয় না। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে মামলা। এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস ও এর পরের চিত্র। গত ৩৫ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৬ জন। বিচার হয়েছে মাত্র দুটি মামলার। তা-ও শিক্ষক হত্যাকা-ের ঘটনায়। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)।
রাবিতে যে ৩৬ জন নিহত হয়েছেন এদের মধ্যে বহিরাগতসহ ছাত্রশিবিরের ১৮ জন, ছাত্রলীগের ৫ জন, জাসদ ছাত্রলীগের ৩ জন, ছাত্রদলের ৩ জন, ছাত্রমৈত্রীর ২ জন, ছাত্র ইউনিয়নের ১ জন রয়েছেন। রয়েছেন দুই শিক্ষক। এছাড়া নিহতদের তালিকায় আছে নিরীহ পত্রিকার হকার, রিকশাচালক ও সাধারণ ছাত্র। এসব ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী আহত ও পঙ্গু হয়েছে। প্রায় ১ হাজার দিন বিশ্ববিদ্যালয় অনির্ধারিত বন্ধ থেকেছে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অর্ধশতাধিক কোটি টাকার। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় কয়েকশ’ মামলা হলেও বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শতাধিক তদন্ত কমিটি করে। কিন্তু একটিও আলোর মুখ দেখেনি। নানা অজুহাতে তদন্ত কর্মকর্তারা হত্যা মামলার দুর্বল তদন্ত করে নানা অসঙ্গতিপূর্ণ চার্জশিট দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে খুনের নিরাপদ স্থানে। শুধু অধ্যাপক ইউনুস হত্যায় দুই জঙ্গির ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে নিহতদের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও চাকরির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ সংঘর্ষ, হামলা, পাল্টা হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বিবদমান ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য নিয়ে। শুধু আওয়ামী লীগের বিগত আমলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি হত্যাকান্ড ও প্রায় ৪০টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হলেও অধিকাংশ আসামি গ্রেফতার হয়নি। জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় ক্যাম্পাসে বার বার সহিংস ঘটনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বিঘিœত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। সেশন জটের কবলে পড়ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ বা নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সাথে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র দিয়েই ক্যাম্পাসের আবাসিক হল ও কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই করে আসছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাহ্ মখ্দুম, সৈয়দ আমীর আল, মাদার বখ্শ হলসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হল থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জুবেরী মাঠ, প্যারিস রোড, পুরাতন ফোকলোর মাঠ, তুতবাগান, হবিবুর রহমান হলের মাঠসহ বেশ কয়েকটি স্পটেও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এসব ছিনতাই করে থাকে। এর আগের এক রিকশাচালক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে আড়াইশ’ টাকা ছিনতাই করে ছাত্রলীগ নেতা ডেবিল। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের পর এ চাঁদাবাজির হার কিছুটা কমেছে।
মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পরই ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের ইফতারির টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন স্থগিতকৃত ছাত্রলীগের সভাপতি আওয়াল কবির জয় গ্রুপের কর্মীরা মারধর ও ছুরিকাঘাতের পর শাহ্ মাখ্দুম (এসএম) হলের দ্বিতীয় তলার ছাদ থেকে দলীয় কর্মী নাসিমকে ফেলে দিলে সে মারাত্মক আহত হয়। ঘটনার দিনই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে একই বছরের ২৩ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ৯ ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হলেও আসামিরা জামিনে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে অপকর্ম করছে।
এরপর ২০১২ সালের ১৫ জুলাই পদ্মা সেতুর টাকা ভাগাভাগির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সভাপতি আহমেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু গ্রুপের কর্মীদের বন্দুকযুদ্ধে মাথায় গুলীবিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল নিহত হন। এ ঘটনায় তৎকালীন কমিটির সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হাসান তুহিন বহিষ্কৃত হলেও পর তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
২০১২ সালের ২ অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন, তৎকালীন কমিটির সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, গণশিক্ষা তানিম, উপ-দফতর সম্পাদক আতিক রহমান আতিক, উপ-পাঠাগার সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতু ও কর্মী রাজীবসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলী ছুঁড়তে দেখা গেছে। ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়া করতে পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ ক্যাডার তানিম তাহমিদ, ফয়সাল আহমেদ রুনু, শরীফুল ইসলাম সাদ্দামসহ বেশ কয়েকজনকে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলী করতে দেখা গেছে। এর পরের দিন অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর সুজনসহ তিন ছাত্রলীগ ক্যাডার অস্ত্রসহ ক্যাম্পাসের বধ্যভূমি থেকে পুলিশের হাতে ধরা পরলেও রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান রানা মতিহার থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতা-কর্মীর হাতে পুলিশের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। তারা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ওই দিন গুলীও ছুঁড়িছে। যার চিত্র বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও এসেছে। ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ রাতে বিনোদপুরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের (৩৭) দুই পায়ের রগ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। এদিন স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক মাইনুল ইসলামের বাঁ-হাতের রগ কেটে দেয়া হয়। ১৪ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের নেতা ও উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের পায়ের রগ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০ এপ্রিল ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জীবন বাঁচাতে তার ওই পা কেটে ফেলেন।
২২ আগস্ট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে তার হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম সাদ্দামের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। এসময় সঙ্গীয় অপর ছাত্রলীগ কর্মী গোলাম রব্বানী তরফদার গুলীবিদ্ধ হন। ১৮ ডিসেম্বর মতিহার থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শিমুল আহমেদ ডিউকের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। বিশ্বদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ আবারও স্বরূপে দেখা যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি ও সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানার নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর তারা অস্ত্র উঁচিয়ে গুলী করে। এ সময় অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী গুলীবিদ্ধ হন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্ট্যান্ডের পেছন থেকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা একটি সাদা চাদর গলায় পেঁচিয়ে পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলী ছোঁড়ে। একই সময় তার বাম পাশে কালো শার্ট পরে পিস্তল দিয়ে গুলী ছুঁড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরীকে। ওই সশস্ত্র দলটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এসে পিস্তল উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলী ছোড়ে আমির আলী হল সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন। একই সময়ে ইমনের সামনেই কালো জ্যাকেট পরা সাদা পিস্তল হাতে গুলী ছুঁড়তে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতুকে। সেতুর সামনে এগিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলী ছোঁড়ে সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মমতাজ উদ্দীন কলা ভবন পর্যন্ত তাড়া করেন কালো চাদর পরা সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম। এ সময় তাকে এক হাতে পিস্তল ও অন্য হাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা গেছে। সাবেক কমিটির এই নেতা বিভিন্ন হামলা ও সংঘর্ষে অস্ত্রবাজিতে নিজের পারদর্শিতা প্রমাণে সফল হলেও দলে তিনি বঞ্চিত নেতা হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ছাত্রলীগ সরকারের জন্য অনেক বড় সমস্যা। রাজশাহীর উল্লেখিত সবশেষ বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ছাত্রশিবিরকে বাইরে রাখলেও সেখানে কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাস করছে ছাত্রলীগ।
বিশ্বজিতের খুনিরা হাড়কেপ্পন ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাদের মতো দামি পিস্তল দিয়ে বিশ্বজিৎকে মারতে পারত তারা। তা না করে চাপাতি দিয়ে কোপাতে কত কষ্টই না করতে হয়েছিল ছেলেগুলোকে। চাপাতি সস্তা ও দেশি, পিস্তল দামি ও বিদেশি। রাবির ছাত্রলীগ নেতা ইমন ও নাসিমরা অ্যানালগ থেকে ডিজিটালে প্রমোশন পেয়েছেন। যে পিস্তল দিয়ে ইমন গুলী করছিলেন, তার ব্র্যান্ডের নাম বেরেটা টমক্যাট। দাম তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। ছোট কিউট স্মার্ট একটা অস্ত্র। এটা দিয়ে বেশি দূরে গুলী করা যায় না। তবে এর ক্যারিশমা অন্য জায়গায়। সুকুমার রায় বেঁচে থাকলে এটা দেখে বলতেন, ‘এতটুকু যন্ত্র হতে এত শব্দ হয়!’। অস্ত্রটা বাংলাদেশে এসেছে-এক বছরও পূর্ণ হয়নি। অবশ্য অবৈধভাবে এর আগেও আসতে পারে। স্মার্ট পিস্তল হাতে ইমনকে ড্যাশিং দেখালেও কাজের বেলায় তিনি ঠনঠনা। গুলীবাজির ভিডিও দেখলে যে কেউ-ই বুঝবেন, অস্ত্রের প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হয়নি। হাত কাঁপে, বুলেটভরা ম্যাগাজিন ভুল করে খুলে ফেলে। নিজের গুলীর শব্দে নিজেই ভয়ে চমকে ওঠে। অন্য কারণের পাশাপাশি এই আনাড়িপনার জন্যও তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারও হতে হয়েছে।