ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নিখোঁজ ছাত্র আল মুকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহকে র্যাব অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার। ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ছাত্রদ্বয়ের পরিবার তাদের বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আল মুকাদ্দাসের পিতা মো. আব্দুল হালিম, মা আয়েশা সিদ্দিকা, ওয়ালীউল্লাহর পিতা মাওলানা ফজলুর রহমান, ভাই খালিদ সাইফুল্লাহ ।
তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে গণমাধ্যমের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের সন্তান আল মুকাদ্দাস ও মো. ওয়ালিউল্লাহ গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ থাকার কারণেই আমাদের এভাবে আপনাদের সামনে আসতে হয়েছে।
তারা আরো বলেন, আল মুকাদ্দাস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিক্হ বিভাগের এলএলবি চতুর্থ বর্ষে ও মো. ওয়ালিউল্লাহ ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তারা দুজনই অত্যন্ত মেধাবী। বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় তারা বরাবর ভালো রেজাল্ট করেছে। মো. ওয়ালিউল্লাহ তার বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স’ান অধিকারী। গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। তারা কোথায়, কিভাবে আছে আমরা জানি না। আমাদের সাথে সর্বশেষ যোগাযোগ হয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি। ঐ দিন রাত ১১.৩০ টার দিকে তারা ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজে উঠেছে বলে আমাদের জানায়।
এরপর থেকেই তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনসহ সব জায়গায় আমরা খোঁজ নিয়েছি। কেউ তাদের সন্ধান দিতে পারছেন না। অবশেষে হানিফ এন্টারপ্রাইজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি যে, তারা রাত ১১.৩০টার হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৭৫০ নম্বর গাড়িতে উঠেছিল। তাদের সিট নম্বর ছিল সি-১ ও সি-২। ‘ওয়ালী’ নামে সিট বুকিং দেয়া হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা আরো জানতে পারি যে, গাড়িটি নির্ধারিত সময়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে গেলে রাত আনুমানিক ০১.০০ টার দিকে নবীনগর (সাভার) পৌঁছলে র্যাবের কালো পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারী ৮-১০ জন গাড়িতে উঠে তাদের নামিয়ে নেয়। তারা নিজেদের র্যাব-৪ ও ডিবি পুলিশ হিসেবে পরিচয় দেয়। ইতোমধ্যে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনে এ জাতীয় সংবাদ প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া গাড়ির যাত্রীরাও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু এরপর থেকেই মুকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহর আর কোনো খবর আমরা জানতে পারছি না।
তারা অভিযোগ করেন, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, র্যাবের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের কোনো তথ্য পাননি। আজ সাত দিন অতিবাহিত হলেও তারা কোথায় আছে, কিভাবে আছে, আদৌ বেঁচে আছে কি না কিছুই জানতে পারেছেন না।
তারা আরো বলেন, আমরা জানি না কি তাদের অপরাধ। যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক করে, তবে আজ পর্যন্ত কেন তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলো না? অথবা তারা কোথায়, কিভাবে আছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানতে পারলাম না কেন? আমরা বিষয়টি নিয়েই পুরোপুরি অন্ধকারে আছি। এ ব্যাপারে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দারুসসালাম থানা ও ৮ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি জিডি করা হয়েছে, যার নম্বর যথাক্রমে ৩১৭ ও ৫২৫। যদি এমন হয় যে, তাদের র্যাব-পুলিশ নয়, অন্য কেউ অপহরণ করেছে; তবে সে বিষয়ে জিডি করার পরও তাদের অনুসন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি না কেন? এই অবস্থায় আমরা আমাদের সন্তানদের জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে চরম আশঙ্কা বোধ করছি। তারা বলেন, আমরা স্বীকার করছি আমাদের ছেলেরা শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। কিন’ এটা তো কোনো অপরাধ নয়। যদি তাদের সত্যিকারভাবে কোনো অপরাধ থেকে থাকে তবে প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হলে আমাদের কিছুই বলার থাকবে না। কিন’ এভাবে তারা নিখোঁজ হয়ে থাকবে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়? তারা বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের সাংবিধানিক দায়িত্ব সরকারের। সুতরাং আমাদের সন্তানদের খুঁজে বের করা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের উপরই বর্তায়। যদি সরকার এখনই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে হয়তো সামনের দিনে আমাদের আরো বড় দুঃসংবাদ শুনতে হতে পারে। আরো অনেক বাবা-মা’র প্রিয় সন্তানরাও এভাবে হারিয়ে যাবে।
তারা বলেন, আপনারা গণমাধ্যমে বিষয়টি ভালোভাবে উপস্থাপন করে আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশা করছি। আমরা এটাও আশা করছি যে, আমাদের সন্তানরা যাতে অতিদ্রুত স্বাভাবিকভাবে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারে, এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।