জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, গোলাম আযমের মেঝো ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (সাবেক) আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করা হয়েছে। ২২ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজার কাজী অফিস লেনের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওয়েব সাইট সুত্রে এ কথা জানা গেছে। পরিবারের সদস্যরা তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
২২ আগস্ট দিবাগত রাত একটার কিছু আগে আবদুল্লাহিল আমান আযমীর ভাই, প্রবাসী সালমান আল-আযমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ডিবি পুলিশের অন্তত ৩০-৩৫ জন তার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে।
বাড়ির কেয়ারটেকার আযাদ জানান, আমি রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির সামনে আসি। তখন গোয়েন্দা পুলিশ এসে আমার কাছে জানতে চান, আব্দুল্লাহিল আমান আযমী কোথায়? আমি কিছু জানি না বলাতে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে। তিনি জানান, গলির ভেতর প্রায় ২০টি মাইক্রোবাসে ৩০ জনের মত ডিবি পুলিশ এসেছিল। তারা গভীর রাতে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, চলে যাওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশেরা আমাকে দেখিয়ে দিতে বলে এই ভবনের আশেপাশে কোথায় কোথায় সিসি ক্যামরা আছে। আযাদ জানান, বাড়িতে ক্যামেরা ছিল না। কিন্তু মহল্লার নিরাপত্তার ক্যামেরা ছিল গলিতে। সেগুলো তারা খুলে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, রাত ১১টার কিছু আগে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বড় মগবাজার কাজী অফিস গলিতে মরহুম গোলাম আযমের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এসময় ওই গলিতে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কিছু লোক বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
আশপাশের বাসিন্দারা জানান, ওই বাসার ভেতর থেকে তারা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। পরে আমান আযমীকে নিয়ে দ্রুত বাসার ভেতর থেকে বের করে এনে গাড়িতে তোলা হয়। এর পর একটি গাড়ির বহর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই গাড়ি বহরের সঙ্গে একটি মোবাইল জ্যামারবাহী গাড়িও ছিল।
মেঝো ভাইয়ের গ্রেফতার নিয়ে রাত ১টার কিছু আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে অধ্যাপক সালমান আযমী। যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা সালমান লিখেছেন, “আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি রাজনীতিতেও জড়িত না। কখনো আইন ভঙের কোনো ঘটনা ঘটাননি। অথচ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের অবিচার একটি ঘৃণ্য ও ভয়ংকর কাজ এবং এটি মানবাধিকারের চরমতম লংঘন।”
গ্রেফতার বিষয়ে সালমান জানান, তাদের মগবাজারের বাসায় ৩০/৩৫ জনের মতো লোক সাদা পোশাকে হাজির হয়ে ব্রিগেডিয়ার আযমীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। এসময় তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানরা কাঁদছিলেন। চার বছরের নিচে তার দুটি সন্তান রয়েছে।”
অধ্যাপক সালমান আরো লিখেছেন “আমার ভাইদের মধ্যে তিনিই শুধু দেশে আছেন ৮৩ বছর বয়সী মাকে দেখাশোনার জন্য।” তিনি দেশের সবার কাছে ভাইয়ের জন্য দোয়ার আহবান জানিয়েছেন।