সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত চলছে সাড়ে ছয় বছর ধরে। এখন পর্যন্ত অন্তত ষাটবার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য হয়েছে। তবে এখনো কোনো আসামিকেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত বা আটক করা তো দূরের কথা ওই দম্পতি যে খুন হয়েছে তার ‘মোটিভ’-ও স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি তদন্ত সংস্থা।
আজ সোমবার মামলায় প্রতিবেদন দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সহকারী পরিচালক পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ কোনো প্রতিবেদন দেয়নি।
প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে, সাড়ে পাঁচ কেজি ওজনের নথি আদালতে উপস্থাপনের পর বিধি অনুযায়ী ঢাকা মহানগর হাকিম মোরশেদ আলম ভুইয়া ফের তারিখ রেখেছেন। আগামী ২৫ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজ ভাড়া বাসায় খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সময় বাসায় থাকা তাদের একমাত্র শিশু সন্তান সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী মাহি সরওয়াার মেঘ বেঁচে যায়।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন মামলা হয়। প্রথমে তদন্তে নামে শের-এ-বাংলা নগর থানা পুলিশ। চারদিনের মাথায় মামলা হাতবদল হয় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে। এর ৬২ দিনের মাথায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার কথা স্বীকার করলে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে কয়েকজন। কিন্তু কোনো আসামিকেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত বা আটক করতে পারেনি। কেন সাংবাদিক ওই দম্পতি খুন হয়েছে তার ‘মোটিভ’-ও এখনো অজানা। তা জানতে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন হওয়া দু’জনের লাশ তুলে ‘ভিসেরা’ (রাসায়নিক) পরীক্ষা এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ‘ফরেনসিক’ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারে পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
অবশ্য তদন্তের দায়িত্বে থাকা বর্তমান কর্মকর্তা গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কিছু পয়েন্টে মামলার তদন্তের অগ্রগতি দাবি করে বলেছিলেন, বিভিন্ন আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। গ্রিল কাটা এবং বিভিন্ন চোর ডাকাত, এ রকম সন্দেহভাজন ১৩০জনের মতো ব্যক্তিকে সন্দেহ করে তদন্ত করছি। ঘটনার সময় হারানো ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোনের ব্যাপারেও র্যাব বিটিআরসির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এগুলো কেউ চালু করলেই সন্ধান পাওয়া যাবে। বিভিন্ন বিষয়ই আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।
তার আগের কর্মকর্তা র্যাব-এর সহকারী পুলিশ সুপার ওয়ারেশ আলী দুই বছর আগে জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে আলামত পাঠানো হয়েছিল, তা থেকে কারো পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়নি। ঢাকা থেকে ২১ জন সন্দেহভাজনের ডিএনএ নমুনা আলামতের নমুনার সঙ্গে মেলানোর জন্যও পাঠানো হয়। কিন্তু ২১ জনের মধ্যে কারো নমুনাই আলামতের ডিএনএ’র সঙ্গে মেলেনি।
এ মামলায় সন্দেহজনক আসামি হিসেবে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়েছে আটজন। এরা হলেন, রুনির বন্ধু তানভীর রহমান (বর্তমানে জামিনে), বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককে একাধিবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের মধ্যে কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।
প্রসঙ্গত, আলোচিত নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করার কথা বলেছিলেন। তবে আগামী ৪৮ বছরেও এ মামলার সুরাহা হবে কিনা তা নিয়ে বর্তমানে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়।