রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য জাতীয় বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি এবং জোর কূটনৈতিক তৎপরতা দরকার।
সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সমস্যা: একটি মানবিক ইস্যু’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে গতকাল সকালে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সমস্যার ‘প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পুনর্গঠন প্রয়োজন। বাংলাদেশ যে মালদ্বীপ, নেপাল বা শ্রীলঙ্কার চেয়ে দুর্বল নয়, তা আমাদের কথায় ও কাজে প্রমাণ করতে হবে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে একটি জাতি আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না।’
চাল আমদানির চুক্তির উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর হওয়ার কথা, উল্টো তারা মিয়ানমারকে সহযোগিতা করছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রায় ছয় লাখ লোক সীমান্ত দিয়ে কক্সবাজার জেলায় ঢুকে পড়েছে। এত লোকের স্থান সংকুলান করা সম্ভব নয়। কক্সবাজারের পর্যটন-ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পরে। এই অর্থনৈতিক ক্ষতি বাংলাদেশের জন্য জাতীয় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধানে বহুমুখী কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে। দেশের নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংস্থাসহ সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি বলেন, সীমান্তে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী পক্ষ নয়। কিন্তু জেনেভা কনভেনশন, ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস, সিডও সনদেও শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা আছে। অধ্যাপক আবরার সীমান্ত উন্মুক্তকরণ নীতি গ্রহণ, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আরও উপস্থিত ছিলেন সহসম্পাদক জাকির হোসেন এবং সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার।