নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ৩৫০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি। বহিষ্কারের পাশাপাশি অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০২ টি ঘটনায় ১১৩ জনকে বহিস্কার করা হয়েছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও বখাটেপনার ঘটনায়। প্রতিটি ঘটনাতেই মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অন্য মামলাগুলো চলমান রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা জানান,দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভুত আচরণের জন্য ৩৫০ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাকে কি অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে তার সুর্নিদিষ্ট তথ্য আমাদের হাতে নেই।
২০১৫ সালের ২৬ জুলাই থেকে জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বহিষ্কৃতদের মধ্যে ১১৩ জন ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও বখাটেপনার অভিযোগে অভিযুক্ত। এর বাইরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৫৭ জন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ২৩ জন, মাদক গ্রহণ ও ব্যবসার কারণে ১৭ জন, চাঁদাবাজির ঘটনায় ১৬ জন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, ভর্তি বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঘটনায় ১৪ জন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ১২ জন, শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণের জন্য ১১ জন, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণায় ৯, পুলিশের সঙ্গে অনৈতিক আচরণের জন্য ৭ জন, মূল দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায় ৭ জন, শিশু নির্যাতনে ৪ জন ও অন্যান্য ঘটনায় ৬০ জন।
এ ছাড়া বহিষ্কারের পাশাপাশি অভিযুক্ত প্রত্যেককেই ভুক্তভোগীদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে খাদিজা হত্যাচেষ্টায় একজনকে যাবজ্জীবনসহ অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। খাদিজার মামলার রায় ব্যতীত ১১২ টি ঘটনায় অভিযুক্ত বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি ভেদে করে মস্তিষ্কও জখম হয়। এই ঘটনায় বদরুলকে বহিষ্কার ও আদালত তাকে যাবজ্জীবন দিয়েছে।
এ ছাড়া গেল বছরের ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ১৪ নভেম্বর বরগুনার পাথরঘাটায় তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর কলেজ পুকুরে লাশ লুকিয়ে রাখার অভিযোগে চার ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রুহি আনাল দানিয়াল, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্ট, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম রায়হান ও উপজেলা ছাত্রলীগ সহ-সম্পাদক মো. মাহমুদ।
সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে ছাত্রলীগ নেতার হামলার শিকার হন শিক্ষার্থী খাদিজা। ফাইল ছবি
২৮ ডিসেম্বর শরীয়তপুরে ছয় নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও সেসব দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় বহিষ্কৃত হন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদার।
১ আগস্ট বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বেতাল গ্রামে দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রুমি আক্তারকে ধর্ষণের অভিযোগে বানারীপাড়া ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সুমন হোসেন মোল্লাকে বহিষ্কার করা হয়।
৭ ডিসেম্বর রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএএইচটি) ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় আইএইচটি ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সহ-সভাপতি মিজান আলী, ফয়সাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিনকে বহিষ্কার করা হয়।
২০ আগস্ট সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়।
একই এলাকায় ৪ সেপ্টেম্বর কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহেল রানা ও কাজীপুরের নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়।
২৪ মে ময়মনসিংহে কলেজছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর কবিরকে বহিষ্কার করা হয়।
৭ ডিসেম্বর খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া এলবিকে সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী জয়ি মন্ডল (২০) আত্মহত্যার ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ইনজামামুল হক মির্জাকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল জয়ী মণ্ডলকে জনসম্মুখে লাঞ্ছনার।