রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে, নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীদের নেয়াসহ বিভিন্ন শর্ত শিথিলের দাবিতে ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সকাল থেকে এ বিক্ষোভ হচ্ছে। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিন সকাল ৮টায় ক্যাটালগার পদে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছাত্রলীগের নব-মনোনীত সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনে গিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।
এসময় বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ছিড়ে ফেলেন তারা। এদিকে এই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করতে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও আইসিটি সেন্টারের প্রশাসক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্যাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এই দুই শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে অস্ত্র হাতে মহড়া ও হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান তারা।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘সকাল ৮টায় প্রথম শিফটের পরীক্ষা বন্ধে হল গেটের তালায় সুপার গ্লু দিয়ে অন্য তালা লাগিয়ে দেন তারা। পরে চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের তালা ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা শুরু করলে রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরীক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেন।
আর পরের পরীক্ষা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট, কাজলা গেট ও বিনোদপুর গেট বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে চাকরি প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন তারা। এসময় বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ছিড়ে ফেলা হয়। এদিকে মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে যেসব পরীক্ষার্থী হলের আশে পাশে ছিলেন তাদের ১০ মিনিটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন এসে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আমরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করে যাবো। এজন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছি।’
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের চাকরি না দিয়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের চাকরি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আসতে হবে নয়তো আন্দোলন চলবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। সে অনুযায়ী সকালে পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরীক্ষার হলে ঢুকে চাকরি প্রার্থীদের বের করে দিয়েছে। আমরা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবো।’ তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সবাই দেখতেও পাচ্ছে তারা এসব কাজকর্ম করে যাচ্ছে, পরীক্ষা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।’
সকালের পরীক্ষায় বিবলিওগ্রাফার কাম রেফারেন্স সহকারী দুইজন ও ক্যাটালগার একজনের পদের বিপরীতে মোট ৭০ জন অংশ নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরীক্ষা দিতে ঢুকলেও নেতাকর্মীরা বের করে দেয়। ১০-১১টায় ডাটা অ্যান্ট্রি অপারেটরে ২০ পদের বিপরীতে ৩১০০ জনের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে তারা পরীক্ষা দিতে ঢুকতেই পারেনি।