ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তি সুত্রে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্বাহী সংসদের জরুরী সভায় ইবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন আল নাহিয়ান খান জয়, মো: শাকিল ভূইয়া ও জাহাঙ্গীর মঞ্জিল পিপাস। কমিটিকে আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিতের সংবাদটি ক্যাম্পাসে পৌছালে ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীসহ ইবি শিক্ষার্থীরা আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ইবি ছাত্রলীগের নেতা কর্মী সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দীয় কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
যে কারণে ইবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়ঃ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। ইবি ছাত্রলীগের ওই দুই নেতার অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে! ছয় মাস আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই নেতারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের অপতৎপরতার কারণে ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্যরা একযোগে পদত্যাগ করবে বলেও গুঞ্জন চলছে। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা দাবির বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে শিক্ষকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক জোটবদ্ধ হয়ে একযোগে পদত্যাগের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। ইবি ছাত্রলীগের এক সদস্য জানান, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে নেতারা। ছয় মাস আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নতুন কমিটি করা হচ্ছে না। এদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দলের সভাপতি ও সম্পাদকের নানা অপকর্ম, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির মাত্রা বেড়ে গেছে। ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্যরা জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে আমরা অতিষ্ট। পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা। এতে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারা ক্যম্পাস বিমুখ হয়ে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সংগঠনকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৬ এপ্রিল ৮ম সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫ এপ্রিল বাংলা বিভাগের ছাত্র শাহিনুর রহমান শাহিনকে সভাপতি এবং একই বিভাগের শিক্ষার্থী এক সময়ের অস্ত্র মামলার আসামী জুয়েল রানা হালীমকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য ইবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ আছে সভাপতি ও সম্পাদক দলের পুর্নাঙ্গ কমিটি না করে, দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই নেতা একক রাজত্ব কায়েম শুরু করে। ইবি ছাত্রলীগের এক ত্যাগী নেতা জানান, কমিটির মেয়াদ এক বছর ছয় মাস পূর্ণ হলেও সভাপতি, সম্পাদক ছাড়া কোন নেতাকর্মী নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদপদবী না পেয়ে সিনিয়র জুনিয়র সব নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। অনেকেই ছাত্রলীগ বিমুখ হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ১০-এর (খ) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নতুন নেতার হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন না হলে কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংসদ আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, কিছু অভিযোগ আমার কাছে আসছে।