জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের কমিটিতে হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। একদিকে কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ; অন্যদিকে শীর্ষ নেতারা পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। বিবাহিত, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী নেতাদের দিয়ে চলছে কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পদ বাণিজ্য, গ্রুপে গ্রুপে সংঘর্ষ ইত্যাদি অভিযোগও রয়েছে। শীর্ষ নেতারা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মানছেন নাÑ কমিটির অধিকাংশ নেতা বলেছেন। তারা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর শরিফুল ইসলামকে সভাপতি ও সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে জবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি করে জবি ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ এর (খ) ধারা অনুযায়ী জেলা শাখার মেয়াদ এক বছর। জবি শাখা একটি জেলা শাখার অনুরূপ। কিন্তু বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্র মানেননি। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরা পদে থাকার যোগ্যতাও হারিয়েছেন। এ কমিটির একাধিক সদস্য সরকারি চাকরি করেন। কেউবা ব্যবসা করেন। কেউবা বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন। তারা কেউ পদে থাকার যোগ্য নন। তাদের অনেকেই নাম ভাঙিয়ে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করছেন। তারা পদ আঁকড়ে ধরে রাখায় বঞ্চিত হচ্ছেন তরুণ নেতারা।
জবি ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ২৩ এর (ক) ধারায় উল্লেখ আছেÑ ছাত্রলীগের কোনো সদস্য বিয়ে করলে তিনি পদপ্রাপ্তির যোগ্যতা হারাবেন। জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ২০ নেতা বিবাহিত। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ জবি ছাত্রলীগের অনেকেই জানেন। বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়ার একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জবি ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেন। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী ৬ সেপ্টেম্বর সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মেলনের আয়োজন করেননি। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুধু গঠনতন্ত্রই ভঙ্গ করেননি; অমান্য করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কমান্ড। এদিকে ১৯ ও ২১ নভেম্বর জবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান জুয়েল তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, ‘জবি ছাত্রলীগের কর্ণধাররা বিবাহিত এবং সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার লক্ষ্যে চেয়ার আঁকড়ে ধরে বসে আছেন।’ সাইদুর রহমানের এ স্ট্যাটাসের পরই জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিয়ে করার খবরটি প্রকাশ্যে আসে।
সাইদুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, জবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত হয়েও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কীভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন, তা তার বোধগোম্য নয়। তিনি এ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘটনের দাবি জানান। জবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত এ কথা সবাই জানেন। সভাপতি শরিফুল ইসলাম বিবাহিত হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদ পাননি। সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এক মেয়ে সন্তানের বাবা। এ কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক একাধিক সদস্য জানেন। এ কথা তারা যদি অস্বীকার করেন তাহলে তার কিছু বলার নেই। কোনো বাবা তার সন্তানকে অস্বীকার করবে বলে তার মনে হয় না। এ বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, জবি ছাত্রলীগের কমিটি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে। এটা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। যারা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং নেশাগ্রস্ত তারা ছাত্রলীগের বদনাম করার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা।
সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু তার অধিকাংশই মিথ্যা। জবি ছাত্রলীগের কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রিত কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যখন কমিটি দেবে তখনই সম্মেলন আয়োজন করা হবে। বিয়ে করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে মোবাইল ফোনের কল কেটে দেন।