অবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এবং দলের প্রভাবশালী মহলের মদদপুষ্ট হয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেছিলেন এ ছাত্রলীগ নেতা। তার বিরুদ্ধে দলীয়কর্মীকে হত্যা, স্থানীয় ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতি, ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি, শিবির নেতার পা কর্তন, সাংবাদিককে হত্যার হুমকি এবং সর্বশেষ চাঁদা না দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দপ্তরে প্রধান প্রকৌশলীকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করার অভিযোগ রয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অস্ত্রবাজ ক্যাডার খ্যাত তুহিনকে সংগঠন থেকে অব্যহতি দিয়ে যুগ্ম সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লবকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এমবিএ’র শিক্ষার্থী। সূত্র মতে, গত বছরের ২০শে জুলাই ২৪তম কাউন্সিলের মাধ্যমে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজ ক্যাডার খ্যাত এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিন। তুহিন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের হোসেন আলী শেখের পুত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এমবিএ’র শিক্ষার্থী। ২০১১ সালের ২১শে আগস্ট রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতির মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ডাকাতির ঘটনায় তিন যুবকের সঙ্গে তুহিনও গ্রেপ্তার হয়। পরে ওই মামলায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। অবশ্য পরে তুহিন এফিডেভিট করলে মামলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, ২০১২ সালের ১৫ই জুলাই গভীর রাতে পদ্মা সেতুর চাঁদার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে সাধারণ সম্পাদক সমর্থক ছাত্রলীগের নেতা আবদুল্লাহ আল হাসান সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। রাবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আহম্মেদ আলী মোল্লা সমর্থক তুহিন ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি। ওই ঘটনার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করে। ২১ নভেম্বর ছাত্রলীগ নেতা তাকিম দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হওয়ার পর এ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
২০১২ সালের ২রা অক্টোবর ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাস থেকে হঠাতে ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্য অস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণ করে ছাত্রলীগের এ চিহ্নিত ক্যাডাররা। এতে শিবির প্রতিপক্ষের অন্তত ৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। সংঘর্ষের সময় পিস্তল ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন তৌহিদ আল তুহিন। এ ঘটনার ছবি বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ পেলে শিক্ষামন্ত্রী এসব অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতার আনার জন্য তৎকালীন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানকে নির্দেশও প্রদান করেছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা ভিসির নিয়ন্ত্রণে থাকায় তিনি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ।
এরপর ২০১৩ সালের ২০শে জুলাই রাবি ছাত্রলীগের ২৪তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ক্যম্পাসে মৌলবাদী ছাত্রসংগঠন শিবিরের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখায় ওই কাউন্সিলে তৌহিদ আল তুহিনকে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
ওই বছরের ২২শে আগস্ট রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নবাব আবদুল লতিফ হল প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে দুর্বৃত্তরা তুহিনের ওপর হামলা চালিয়ে তার হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। তবে এ ঘটনায় শিবিরকে দায়ী করে আসছে ছাত্রলীগ। প্রায় তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ফের ক্যাম্পাসে ফিরে আসে তুহিন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কয়েক মাস ক্যাম্পাসে তৎপর ছিলেন না। পরে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে তৎপরতা নামে এহেন কাজ নেই সে করেনি। চলতি বছরের ১৬ জুন শিবির নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলুকে আটকের সময় পুলিশের সামনেই পিস্তল উঁচিয়ে বাবলুকে গুলি করতে উদ্যত হন তুহিন। এতে ব্যর্থ হয়ে তার নেতৃত্বেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা আরেক শিবির নেতা রাসেল আলমের গোড়ালি থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর আগে তারই নেতৃত্বে রাসেলকে তুহিন প্রায় ২ ঘণ্টা আটকে রেখেছিল বলে প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান।
২৮শে জুন মুঠোফানে নাম্বার সেভ না থাকায় দৈনিক আমাদের সময়ের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আমজাদ হোসেন শিমুলকে গালিগালাজ এবং হত্যার হুমকি দেন রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিন। এবিষয়ে ওইদিন রাতেই নিরাপত্তা চেয়ে তুহিনের বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন সাংবাদিক শিমুল।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপরে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনিরকে পিস্তলের বাঁট ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। সেখানেও তিনি প্রথমে আঘাত করে বলে সূত্র জানাায়। তবে এ ঘটনায়
আহত প্রকৌশলী সিরাজুম মুনির এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা বা লিখিত অভিযোগ করেননি।
মতিহার থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, এ ঘটনায় শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত কেউ মামলা বা লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ আসলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে তিনি জানান।