পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তিন সাংবাদিকের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)। অন্যথায় সারা দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
রোববার সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নয়ন এক যুক্ত বিবৃতিতে এ আল্টিমেটাম ও হুঁশিয়ারি দেন। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত এক মাসে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অথচ একটি ঘটনাতেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেকক্ষেত্রে দায়সারা দুঃখ প্রকাশ করেই তারা ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থেকেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ। অপরাধীদের বিষয়ে ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের এমন অবস্থান অনাকাক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
সাংবাদিক নেতারা ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বুয়েটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিন। ছাত্রলীগকে অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল না করে হামলাকারীদের বিচারে কার্যকর ভূমিকা রাখুন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যায় বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছে- এমন খবর পেয়ে সেখানে সংবাদ সংগ্রহে যান দৈনিক কালের কণ্ঠের ঢাবি প্রতিনিধি মেহেদী হাসান, ইত্তেফাকের কবিরুল ইসলাম ও জনকণ্ঠের মুনতাসির জিহাদ।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে শিক্ষার্থী অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন, পত্রিকার পরিচয়পত্র ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে সেখান থেকে হলের ক্রিড়া কক্ষে নেয়া হয়। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সেখানে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরবর্তীতে ঘটনাটি জানাজানি হলে ঢাবি সাংবাদিক সমিতি ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় অবিযুক্তরা হলেন- বুয়েটের শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক আসিফ রায়হান মিনার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এসএম মাহমুদ সেতু, যুগ্ম-সম্পাদক নাফিউল আলম ফুজি, প্রচার সম্পাদক নিলাদ্রি নিলয় দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ মাহমুদ অয়ন, সহ-সভাপতি সন্টুর রহমান, মেকানিক্যাল বিভাগের অর্ণব চক্রবর্তী সৌমিক ও মিনহাজুল ইসলাম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রাউফুন রাজন ঝলক, নেভাল আর্কিটেকচারের মেহেদী হাসান, তড়িত কৌশলের ফারহান জাওয়াদ প্রমুখ।
এর আগে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।