লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা: ফয়েজ আহমদকে নিজ বাসায় গুলি করে হত্যা করেছে র্যাব। হত্যার পর তাকে বাসার ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। গত শুক্রবার গভীর রাতে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে জেলা ১৮ দলীয় জোট। তবে এ ব্যাপারে র্যাবের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কথা বলেননি পুলিশ প্রশাসনেরও কেউ। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। র্যাবের টহলে চার দিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিহতের স্ত্রী মারজিয়া ফয়েজ জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে র্যাবের একটি দল গেট ভেঙে বাসায় ঢুকে বিভিন্ন রুম তল্লাশি চালায় তারা। এক পর্যায়ে ডা: ফয়েজকে তাদের সাথে বাসার ছাদে যেতে বলেন। এ সময় তিনি ছাদে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আমি অসুস্থ। তাই সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যেতে কষ্ট হবে। আমাকে নিতে হলে থানায় নিয়ে চলেন। এ সময় তারা ফয়েজকে আটক করে জোরপূর্বক বাসার ছাদে নিয়ে প্রথমে গুলি করে। পরে সেখান থেকে নিচে ফেলে দেয়। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গভীর রাতে হাসপাতাল এলাকায় তার লাশ পড়ে আছে বলে আমরা খবর পাই।
এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা: জয়নাল আবেদিন জানান, রাত ১টা ৪০ মিনিটে কে বা কারা হাসপাতালের নিচে তার লাশ ফেলে চলে যায়। লাশের মাথায় ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ দিকে রাতেই ডা. ফয়েজ আহমদের হত্যার কথা শহর সহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রিয় নেতার নিহতের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন দলের নেতাকর্মীরা।পরে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর বাদ জোহর শহরের উত্তর তেমুহনী লিল্লাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে ওই মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় বিপুলসংখ্যক র্যাবের টহল আর নজরদারি উপেক্ষা করে তার নামাজে জানাজায় দলমত নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। তারা বলছেন, একজন রাজনীতিক হলেও পুরো জেলায় সেবক হিসেবেই পরিচিত তিনি। দরিদ্র রোগী দেখতেন ফি ছাড়াই। শুধু তা-ই নয়, উদার হস্তে দান করে হতদরিদ্রদের পাশে ছিলেন সব সময়। তবে তাকে কেন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো?
এই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মূল পরিকল্পনাকারী র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ। এই ঘটনা মাত্র ছয় মাসের দায়িত্ব পালনকালে সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আরো নয় খুন ও ছয় গুমের অভিযোগ উঠেছে। বর্বরোচিত সাত খুনের ঘটনায় তারেক সাঈদ গ্রেপ্তারের পর এখন একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছে লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার বাকি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। মিলেছে প্রত্যক্ষদর্শীও।
বাবাকে নির্মমভাবে হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছেলে বেলাল আহমেদ বলেন, র্যাব সদস্যদের দেখেই আমি আতঙ্কিত হয়ে যাই। আমি চেষ্টা করি বাসা থেকে সরে যাওয়ার জন্য। আমি ছাদের ওপর উঠে আমি কার্নিশে আশ্রয় নেই। ‘কিছুক্ষণ পর দেখি তারা (র্যাব) আব্বুকে ছাদে নিয়ে আসে। দীর্ঘসময় তারা আব্বুকে টর্চার করে। খুঁজতে থাকে আমাকেও। তারেক সাঈদ সেদিনের অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে আব্বুকে গুলি করে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়’ যোগ করেন তিনি।র্যাবের অভিযানে লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে রক্তঝরা দিনটির শুরু ১২ ডিসেম্বর ২০১৩। সে সময় র্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদের নেতৃত্বে অভিযানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু দু’পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তার বাসায় ডাকাত ঢুকেছে এমন খবরে দলীয় নেতাকর্মীরা আসতে চাইলে র্যাবের গুলিতে নিহত হন যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েল, মাহবুব, শিহাব ও সুমন।