দেশজুড়ে গুম-অপহরণ-খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। রাজধানীতে মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে অন্তত ৫ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তারই প্রমাণ। কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, সাবেক বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত আহম্মেদ ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া এক ছাত্র রয়েছেন এ ৫ জনের মধ্যে। হঠাৎ অপহরণ-গুম বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়ই বটে। এর চেয়েও বেশি আতঙ্কের খবর, নিখোঁজ হওয়াদের স্বজনরা দাবি করছেন, এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা রহস্যজনক। তাদের আচরণে মনে হচ্ছে, অপহৃতদের বিষয়ে ধারণা আছে, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের জানানো হচ্ছে না। এর আগেও বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নামে অনেককে অপহরণের পর তাদের লাশ পাওয়ার খবর এসেছে। কাজেই এ বিষয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার।
এমন একটা সময় দেশে গুম-অপহরণের ঘটনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যখন (৩০ আগস্ট) বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী দিবস পালিত হয়েছে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। স্বজন হারানো বহু মানুষ ওইদিন তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা ও তাদের ফিরে পাওয়ার আকুল আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন। জানা যায়, গত সাড়ে পাঁচ বছরে অন্তত ৫০২ জন বিভিন্নভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। আমরা মনে করি, এত মানুষের ভাগ্যে কী ঘটেছে, কে-ই বা তাদের অপহরণ করেছে সেসব উদঘাটিত হওয়া দরকার। অন্যথায় গুম-অপহরণের ঘটনা যে আরও বাড়বে, তা সাম্প্রতিক পাঁচ অপহরণের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
স্বাধীন একটি দেশে সক্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও এভাবে মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার মধ্য দিয়ে বড় রাজনৈতিক নেতা গুম হওয়ার ঘটনার শুরু। সর্বশেষ তিন দিন ধরে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কল্যাণ পার্টির মহাসচিবের। এটা সহজেই অনুমেয়, যদি ইলিয়াস আলীর সন্ধানের ব্যাপারে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিত, তাহলে রাজনৈতিক তো বটেই, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের অপহরণের ঘটনাও বহুলাংশে কমে যেত। এমনকি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত অপহরণ ও সাত খুনের ঘটনাও হয়তো ঘটত না। গুম-খুন-অপহরণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে সরকারের উচিত একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা। এতে স্বজন হারানো মানুষ অন্তত কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে।