তোফাজ্জল হোসেন কামাল :
দেশজুড়ে খুন খারাবির ঘটনা বাড়ছেই। কোনভাবেই এর লাগাম টেনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন গড়ে ১১টিরও বেশি খুনের ঘটনা ঘটছে। মাসে খুন হচ্ছে ৩৪০। সে হিসেবে গত ৬ মাসে দেশজুড়ে খুনের ঘটনা ঘটে ২০৪০টি। পুলিশ সদর দফতরের হিসেবেই এ চিত্র ফুটে উঠেছে। পুলিশের পরিসংখ্যান মতে, গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে খুনের ঘটনা ঘটে ৯৮২টি। জুলাই তিন মাসে তা পূর্বের তিন মাসের খুনের ঘটনাকে ছাড়িয়ে দাঁড়ায় ১০৫৮টিতে। খুনের ঘটনা ছাড়াও দেশজুড়ে অন্যান্য অপরাধের মাত্রা বাড়ছেই। অপরাধীরা রাজনৈতিক কারণেই বেপরোয়া হয়ে পড়ায় দেশজুড়ে অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিমত।
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, দেশজুড়ে অপরাধ দমনে পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে সারাদেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ১২৬। এ সময়ের মধ্যে দস্যুতার ঘটনা ঘটে ২৭৯টি। ডাকাতি ও দস্যুতাকে পুলিশ সংজ্ঞায়িত করে পৃথক ঘটনায় দাঁড় করালেও জনমনে দুটি সংজ্ঞারই একটি অর্থ ডাকাতি হিসেবে পরিচিত। সে অর্থে সারাদেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৪০৫টি। সূত্রমতে, বিগত তিন মাসে সারাদেশে খুনের ঘটনা ঘটে ১০৫৮টি। সে হিসেবে প্রতি মাসে খুনের ঘটনা ঘটে ৩৫১টির বেশি।
এর আগের তিন মাসের হিসেবে প্রতি মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছিল ৩২৭টি। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে সারাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ৪ হাজার ৫০৯টি, শিশু নির্যাতনের ঘটনা ৩৯৩টি, অপহরণ ২২৮টি, চুরি ২ হাজার ১৭৩ সটি, পুলিশ আক্রান্তের ঘটনা ১২৪টি, ধর্ষণ ৯১৭টি, গাড়ি চুরি ৫১৪টি, ছিনতাইর ২৭৩টি ঘটনা ঘটে। একই সময়ে দাঙ্গায় খুন হয় ৮ জন। পুলিশের পরিসংখ্যানে গত তিন মাসের মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই থানা পুলিশে মামলা রুজু হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ২৩০টি। আর আদালতে মামলা রুজু হয় ৪২ হাজার ১৮৬টি। সবমিলে এক মাসেই মামলা দায়েরের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৬টিতে এবং প্রতিদিন দেশে মামলা রেকর্ড করা হয় ৫২১টিরও বেশি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন যে হারে খুনের ঘটনা ঘটছে তাতে নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাও রয়েছে। এই ধরনের হত্যাকান্ডের ঘটনাও অন্যান্য অপরাধের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেড় শতাধিক নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় কিছু কিছু লাশের পরিচয় পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এসব হত্যাকান্ডের সহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। রাজধানীর উত্তরার শ্যামপুর, শনির আখড়া, কদমতলী, মিরপুর, পল্লবী, যাত্রাবাড়ি, কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, সাভারসহ কয়েকটি এলাকায় নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে।
রাজধানীর বাইরে বরিশাল, খুলনা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নাটোর, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, এলাকায়ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। গত ৮ অক্টোবর নাটোরের বাগাতিবাড়ায় প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবুকে। দেশজুড়ে খুন খারাবিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা বাড়ার ঘটনাকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা আইন শৃক্মখলা পরিস্থিতির অবনতিকেই দায়ী করেন। তাদের মতে আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতিতে জনগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মনে অস্থিরতা বাড়বে।
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল বৃহস্পতিবার সংগ্রামকে জানান, দেশের আইন-শৃক্মখলা রক্ষায় পুলিশ সাধ্যমতো কাজ করছে। কিন্তু কিছু সামাজিক অপরাধের কারণেই খুনের পরিসংখ্যান বাড়ছে। তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ত্রৈমাসিক অপরাধ আলোচনা সভাতে আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির এহেন অবস্থায় গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীতে ইন্ডাসিট্রয়াল পুলিশের উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় দেশের আইনস-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।