হত্যার পরিকল্পনা এক বছর আগে থেকেই ছিল, চেষ্টা করা হয়েছে একাধিকবার। হত্যার পরিকল্পনা সফল করতে ব্যবহার করা হয় নারী সদস্যকেও। আর এ নারী সদস্য দলে টানা হয় পরকীয়া প্রেমের মাধ্যমে। এমন ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকান্ডে।
মিল্কি হত্যা মামলার প্রধান আসামি এসএম জাহিদ সিদ্দিক ওরফে তারেককে তথ্য প্রদানকারী ও হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী একজন নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শনিবার র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এ হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী এবং তারেককে তথ্য সরবরাহকারী ফাহিমা ইসলাম লোপাকে গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে র্যাব-১ এ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামি ফাহিমা ইসলাম লোপা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, বিগত ৩ বছর পূর্ব হতে রিয়াজুল হক মিল্কি তার স্বামী মারুফ রেজা সাগরকে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতো। এ কারণে রিয়াজের ওপর তার প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মে। প্রায় ১ বছর পূর্বে থেকে এসএম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ওরফে কিলার তারেকের সাথে তার পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরো জানান, মতিঝিল ব্যাংক কলোনি এলাকার রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ও চাঁদার টাকা আদায় ইত্যদিকে কেন্দ্র করে ২ বছর পূর্ব হতে রিয়াজ ও তারেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। প্রায় এক মাস পূর্বে তারেক রিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। রিয়াজের অবস্থান সম্পর্কে তার স্বামী সাগরের মাধ্যমে অবহিত হয়ে সে তারেককে জানাতো।
আসামি আরো জানায়, রিয়াজের প্রতি তার ক্ষোভ ও তারেকের প্রতি ভালোবাসার কারণে গত ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় মোবাইলের মাধ্যমে সাগরের সাথে কথা বলে রিয়াজের অবস্থান সম্পর্কে তারেককে জানায়। তারেক সেই অনুযায়ী প্রথমে গুলশানস্থ ভাসাবী শপিংমলে এবং পরে সপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে গিয়ে অবস্থান নিয়ে রিয়াজকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি তার স্বামী সাগরের মাধ্যমে জানতে পেরে পরবর্তীতে রাত সোয়া ১টার সময় সাহাবুুদ্দিন হাসপাতালে মিল্কিকে দেখতে যান।
আসামি জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায় যে, ঘটনার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি পূর্ব হতে জানতেন কিন্তু তার স্বামী সাগরকে বিষয়টি জানাননি। পরদিন ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি নিশ্চিত হন যে, তারেকই রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে হত্যা করেছে।
গত ২৯ জুলাই রাতে ঢাকা মহানগর যুবলীগ (দক্ষিণ)-এর সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি (৪৩), রাত আনুমানিক ১টায় গুলশান-১, রোড নং-১২৩, হোল্ডিং নম্বর-৪৩/বি সপার্স ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের সময় মূল ফটকে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ৮/১০ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী রিয়াজুল হক খান মিল্কির ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সন্ত্রাসীরা রিয়াজুল হক খান মিল্কির মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১০/১২ রাউন্ড গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেল ও গাড়ি যোগে পালিয়ে যায়।
হত্যাকান্ডের পরপরই বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সপার্স ওয়ার্ল্ড মার্কেটের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে গোলাগুলির সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের র্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল গ্রেফতারের লক্ষ্যে সচেষ্ট হয়।
পরবর্তীতে গত ৩০ জুলাই র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল আনুমানিক রাত ২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামি ক্রসফায়ারে নিহত এসএম জাহিদ সিদ্দিক ওরফে তারেককে (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমানবন্দর থানাধীন সেক্টর-১ রোড নং-১৩ হাউজ নং-০৩ জসিম উদ্দিন রোডের ফরচুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পেয়ে গ্রেফতার করে তাকে ওই হাসপাতালেই র্যাব-১ কর্তৃক প্রহরাধীন অবস্থায় রাখা হয়।
পরবর্তীতে র্যাব-১ কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এসএম জাহিদ সিদ্দিক ওরফে তারেকের সহযোগী ছয় জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের (তারেক ব্যতীত) গত ৩০ জুলাই গুলশান থানার মামলা নং ৪৪ (তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৩) ধারা- ৩০২/৩৪/১০৯ দঃ বিঃ মূলে সংশ্ল্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।
গত ৩১ জুলাই ফরচুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ওরফে কিলার তারেককে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। সেদিন আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব-১ এর একটি টহল দল আসামি তারেককে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে স্কট করে গুলশান থানায় রুজুকৃত মামলার বিপরীতে তাকে থানায় হস্তান্তরের জন্য থানার দিকে রওয়ানা হওয়ার সময় তারেকের সহযোগীরা র্যাবের মাইক্রোবাসটির সামনে ব্যারিকেড দিয়ে মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে আসামি জাহিদ সিদ্দিক তারেক ওরফে কিলার তারেককে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
গোলাগুলির একপর্যায়ে তারেক ও তার অপর সহযোগী সন্ত্রাসী শাহ আলম র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।