চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১২ জানুয়ারী ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রশিবিরের নেতা মামুন হোসেন নিহত হয়। এসময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে অন্তত ২০ জন আহত হন।
নিহত মামুন হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হল শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি।’
সংঘর্ষে গুরুতর আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র সাইদুল ইসলাম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহাত, ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এনামুল হক ও গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আমজাদ। আহত অন্যদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার রাখাল চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাইদুল ও রাহাতের অবস্থা খুব গুরুতর। তাঁদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়েছে।
আহত আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শাহ আমানত হলের ডাইনিংয়ে বিকেলে খাবার খাচ্ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হলে হামলার চেষ্টা চালায়। তবে হলের মূল ফটক বন্ধ ছিল। পরে তারা ফটক ভেঙে হলে ঢুকে এলোপাতাড়ি কোপায়।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। মিছিলটি আলাওল হল, ২ নম্বর গেট, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, সোহরাওয়ার্দী হল হয়ে ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত শাহ আমানত হলের সামনে যায়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হলের মূল ফটকের তালা ভেঙে হলের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। গুলির শব্দও শোনা যায়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কয়েক দফা ওই হলে ঢোকার চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধায় ব্যর্থ হয়। পরে ছাত্রলীগের দাবির মুখে পুলিশ ওই হলে তল্লাশি চালিয়ে শিবিরের ১৮ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হলে ঢুকলে শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয় এবং বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হলের দিকে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।