বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সাংবাদিক নির্যাতনে এগিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল।
বিশ্বব্যাপী বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে এমন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন “আর্টিকেল ১৯” তার একটি প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে।
আজ রোববার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ-২০১৪’ নামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের মাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। এ হয়রানির মধ্যে রয়েছে মানহানি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা।
এ ছাড়া ২০১৪ সালে মোট ২১৩ জন সাংবাদিক ও আটজন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন ৪০ জন। আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন সাংবাদিক।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে নির্যাতনের তালিকায় উল্লেখিত ঘটনার ২৩ ভাগই ঘটেছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দ্বারা। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে ১১ শতাংশ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ ১৩ জন মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান বলেন, এমন নির্যাতন সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য হুমকি।
এ প্রসঙ্গে, দৈনিক দিনকাল পত্রিকার সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চিত্র তুলে রেডিও তেহরানকে বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা এ বছর আরো বেড়েছে।
সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ডা. ফায়েজুল হাকিম বলেন, বর্তমানে দেশে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসীন থাকার কারণে সরকার জনগণকে ভয় পায়। আর তাই গণমাধ্যমকেও ভয় পায়।
আর্টিকেল ১৯ নামের আন্তর্জাতিক সংগঠননের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের উপর অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচারিক তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণমাধ্যমের কর্মীদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য একটি কার্যকর সুরক্ষা কৌশল ও নীতিমালা করার সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রেডিও তেহরান।