ইবরাহীম খলিল
# প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষিত বেকার শ্রমবাজারে আসছে
# বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি
# সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বেকার জনগোষ্ঠীর তথ্য নেই
# দেশে-বিদেশে কোথাও কর্মসংস্থান হচ্ছে না
দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা। ক্রমান্বয়ে তা প্রকট আকার ধারণ করছে। এই হার আস্তে আস্তে জ্যামেতিক রূপ লাভ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। নতুন করে চাকুরী হারাচ্ছেন অনেকেই। পড়াশোনা করার পরও শিক্ষিত যুবকদের কর্ম না থাকায় তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। হতাশা থেকে তারা বিপথে পা বাড়ায়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগেও লেখাপড়া করে দেশে চাকুরী না মিললে বিদেশে পাড়ি জমাতো। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পথও রুদ্ধ থাকায় দেশের লাখ লাখ যুবক এখন কর্মহীন হয়ে হতাশা নিয়ে সময় পার করছে। ফলে এরা কর্মহীনভাবে এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করে। মৌলিক চাহিদা মেটাতে না পেরে অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ একাধিক সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে কর্মহীন এবং বেকারত্বের হার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সচেতন মহলে। এর মধ্যে শিক্ষিত জনসাধারণের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প সম্পদ এবং বিশাল জনরাশির এই দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। দেশের জনগোষ্ঠিী নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না। বেকারত্ব সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সূত্র মতে, গত ছয় মাসে শিল্প খাত থেকেই প্রায় ১০ লাখ লোক কাজ হারিয়েছেন। নির্মাণ খাত, কৃষি, পোলট্রি এবং সেবা খাতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। নতুন কর্মসংস্থানের বিকল্প পদ্ধতি দেশের বাইরে অভিবাসন। কিন্তু সেখানেও চলছে স্থবিরতা।
পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। ২০০০ সালের তথ্য অনুযায়ী শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ লাখ ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষিত বেকার শ্রমবাজারে আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ চাকরি পেলেও প্রায় ৫৫ শতাংশ বেকার থাকছে কিংবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বেকার, বর্তমান কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থার হিসাব বলছে, বাংলাদেশে ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত তাদের মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৩ শতাংশ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন। বাকীরা অদক্ষ। এছাড়া ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বহুমাত্রিক দক্ষতা কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কোন তথ্য নেই। তবে শ্রমশক্তি ও শিশু শ্রম জরিপের দুই বছর আগের অথাৎ ২০১৩ সালেই ১৫ বছরের বেশি বয়সী বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৬ লাখ ছাড়িয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থাপিত ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মসংস্থান উপযোগী ১৯টি ট্রেডে বছরে ২৫ হাজার বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা নিজ উদ্যোগে দেশে বিদেশে বিভিন্ন আত্মনির্ভরশীল পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন।