বেকারত্ব

বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য মতে দেশে  ৪ কোটি ৮২ লাখ মানুষ প্রকৃত বেকার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শ্রমশক্তির বাইরে (বেকার) ছিল ৪ কোটি ৬৬ লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। বেকারত্বের কারণে ৭৮ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে বিদেশে কর্মরত। কাজের অভাবে ভিটেমাটি বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে হলেও বিদেশে যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ফিরছেন লাখ লাখ তরুণ বেকার। একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ বেকার।

বেকারত্বের এমন চিত্র যে দেশে সে দেশে তিন লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে ভারত চতুর্থ রেমিট্যান্স আহরণকারি দেশ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে। এক দিকে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা বিদেশে কঠোর শ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। অপর দিকে তাদের পাঠানো প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ টাকা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এখানে কর্মরত বিদেশীরা। বাংলাদেশ ভারতের চতুর্থ রেমিট্যান্স আহরণকারি দেশ। চাকরিতে উচ্চপদগুলো ভারতীয়দের দখলে, অথচ বাংলাদেশি যুবকরা বেকার!

 

আইএলওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বেকারের হার বেশি:

২৪ জানুয়ারি ২০১৮ প্রকাশিত হওয়া রিপোর্টে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা ও ভুটান এ হার কমিয়ে এনেছে। ভারতে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বিশ্বজুড়ে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অবস্থা এবং পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ উচ্চশিক্ষিতরাই বেশি বেকার:

বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ কর্মক্ষম লোক চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করেন৷ কিন্তু কাজ পান মাত্র সাত লাখ মানুষ৷  ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের শতকরা ৪৭ ভাগ স্নাতকই বেকার৷ যেখানে ভারতে ৩৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেকার রয়েছেন৷ ওদিকে বাংলাদেশে এখনো কৃষিখাতেই সবচেয়ে বেশি লোক কাজ করেন৷ এখনো বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪৮ ভাত কৃষি খাতে, ৩৭ ভাগ সেবা খাতে এবং শিল্পখাতে ১৫ ভাগ৷

=প্রতি পাঁচজন বেকারের মধ্যে দুজন উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।

=মনমতো চাকরি পাচ্ছেন না।

=বাংলাদেশে যত লোক বেকার, তাঁদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে দুজন উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।

=শ্রমশক্তি ২০১৬-১৭ জরিপে বলা হয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক পাস তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি প্রায় ১৫ শতাংশ।

=উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ৬ লাখ ৩৮ হাজার তরুণ-তরুণী কোনো কাজ পাননি।

=স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ৪ লাখ ৫ হাজার লোক এখনো পছন্দ অনুযায়ী কাজ পাননি।

=অন্যদিকে পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি, এমন মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ৩ লাখ।

=বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ আছেন ৬ কোটি ৩৫ লাখ।

=তবে তাঁদের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ লোক।

জিএসপি সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ সরকার:

২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক মুক্ত প্রবেশের সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত করেছিল মার্কিন সরকার। ২০১২ সালের নভেম্বরে আশুলিয়ার পোশাক কারখানা তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ১১০ জনের মৃত্যু এবং তারপর মাত্র ৫ মাসের মাথায় ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পর শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র তাদের এক বিবৃতিতে জানায় বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত থাকবে। জিএসপি সুবিধা ফিরে না পাওয়ায় অনেক তৈরি পোষাক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে আছে।

 

দেশে কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকারের ব্যর্থতা:

বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি একই অঙ্কের কাছাকাছি থাকলেও সেই অনুপাতে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। মূলত: দেশে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও ব্যক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যর্থতা, অকৃষি খাতে অধিক প্রাধান্য না দেওয়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দূরাবস্থা, দেশে বেসরকারি ও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে অপ্রতুলতা, বিনিয়োগের বিপরিতে অধিক ঝুঁকির আশঙ্কা, অতিমাত্রায় ব্যাংক সুদ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সকলপ্রকার কাজে অধিক দলীয়করণ, দুর্নীতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জায়গা ও অবকাঠামোগত সমস্যাসহ আর্থিক বিশৃঙ্খলতার কারণে আমাদের দেশে বিনিয়োগ দিন দিন কমতে শুর” করেছে। ফলে ক্রমাগত হারে সঙ্কুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থান।

বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানিতে সরকারের ব্যর্থতা:

বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে৷ জনশক্তির সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যে এখন খুব বেশি মানুষ যাচ্ছে না৷ বায়রা-র সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালাম মনে করেন, কূটনৈতিক ব্যর্থতাই এর মূল কারণ৷মধ্যপ্রচ্যে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় ডয়চে ভেলেকে এমনটিই বলেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-র সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালাম৷ তিনি বলেন, ‘‘কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি এখন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে৷ আগের তুলনায় আমরা ৫ শতাংশ মানুষও পাঠাতে পারি না৷ মালয়েশিয়ার বাজারও বন্ধ৷ ফলে আমরা একটা খারাপ সময় পার করছি৷’’

 

বেকারদের আত্মহত্যা:

জরিমানা দিতে না পারার হতাশা থেকে আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে একটি চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী। বেকারত্ব ও হতাশা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেন বাংলাদেশে। গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করেন। বয়সের হিসেবে তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মঘাতী হচ্ছেন৷ তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এরচেয়ে আরো ১০ গুণ বেশি মানুষ৷

২০১৫ সালের এপ্রিলে কোটালীপাড়ায় বেকারত্বের অভিশাপ সহ্য করতে না পেরে স্ত্রীর শাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।

কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক ছবেদ আলী ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ১৩ মাস আগে  তাদের বিয়ে হয়।  বিয়ের আগে দিপক বাকচী ঢাকায় একটি কোম্পানিতে গার্ডের চাকরি করতেন। বিয়ের পরে সে আর চাকরিতে যোগদান করেননি। পরে সে এলাকায় কাজের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় কোনো কর্মসংস্থান করতে পারেননি দিপক। দিপকের বাবা সামান্য একজন মাছ বিক্রেতা হওয়ায় তার একার উপার্জনে সংসার চলছিল না।

শুক্রবার ভোররাতে বাড়ির পাশের একটি কাঁঠালগাছে স্ত্রীর শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে তারা আত্মহত্যা করেন। কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

বেকারত্ব

বেকারত্ব

No Content Available

বেকারত্ব

বেকারত্ব

2019 সালের মধ্যে বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা দাঁড়াবে 30 লাখ

play-sharp-fill

 

Unemployment in Bangladesh- বাংলাদেশে বেকার সমস্যা

play-sharp-fill

 

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ – CHANNEL 24

play-sharp-fill

 

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ

play-sharp-fill

 

দেশে বেড়েছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা- CHANNEL 24

play-sharp-fill

 

বর্তমান বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা কত জেনে নিন।

play-sharp-fill

 

বাংলাদেশে কী অভিজ্ঞতা শিক্ষিত বেকারদের

play-sharp-fill

বেকারত্ব

বেকারত্ব