আমাদের দেশে যারা অধিক পরিমাণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং গণতন্ত্রের কথা উচ্চারণ করেন, পরিতাপের বিষয় যে, সে সব দল, উপ-দলই গণতান্ত্রিক অসহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িক কর্মকা-ের বেশি পরিচয় দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে সংঘটিত ঘটনাবলীতে তাদের দুটি চরিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটি হলো আর্থিক স্বার্থ উদ্ধার, অপরটি রাজনৈতিক স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে নিজেরা এ জাতীয় অপকর্ম করে অপর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে এ জন্য অভিযুক্ত করা। এরূপ ঘটনাবলীর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হলো, সংখ্যালঘুদের জন্যে বাহ্যিকভাবে মাত্রাতিরিক্ত দরদ দেখানো। যাতে তারা মনে করে যে, মুসলমানদের মধ্যে অমুক ধর্মনিরপেক্ষ দলটিই আমাদের প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল। যদিও বাস্তব অবস্থা হলো প্রথমোক্ত ধরনের। আমাদের এই মন্তব্য কোনো কথার কথা নয়, তা যে অতিবাস্তব, গত পনের জুলাইর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরাখবরই তার বড় প্রমাণ। ঐ দিনের একটি দৈনিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে হিন্দুদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে অনুষ্ঠানটি প- করে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে খবরটিতে বলা হয়, আকস্মিকভাবে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র, লোহার রড নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে প্রায় একশ’ যুবলীগ কর্মী নির্বিচারে ভাংচুর করে। তারা শ্রদ্ধানুষ্ঠানের উপকরণ পূজার সামগ্রী লাথি মেরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। শ্রাদ্ধ সামগ্রী ফেলে দিয়ে পুরোহিত পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যায়। নিমন্ত্রিত অতিথিরা, শিশু-কিশোর, নারীরা খাবার টেবিলে থরথর করে কাঁপতে থাকে। পুরো অনুষ্ঠান স্থলে ভয়ার্ত নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এ তা-ব চালিয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাবার পর পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌঁছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন, যুবলীগ, ছাত্রলীগের এরূপ অপকর্ম নতুন কোনো ব্যাপার নয়। যদিও তারা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করে এবং দেশের ইসলামী সংগঠনকে সাম্প্রদায়িক বলে অধিক আখ্যায়িত করে। বেশি নয়, সাম্প্রতিককালে সংঘটিত ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি ঘটনা এখানে তুলে ধরছি। যেমন কিছুদিন আগে গৌরনদীতে সংখ্যালঘুদের বাড়ি দখল ও গাছ-মাছ লুট করেছে যুবলীগ ক্যাডাররা। কটিয়াদিতে মূর্তি ভাংচুর, সংখ্যালঘুদের মাঝে আতঙ্ক, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের লেংগুড়া উদয়ন সংঘ কালী মন্দিরের কালী প্রতিমা, মহাদেব ও শীতলা প্রতিমা রোববার গভীর রাতে ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। কয়েক মাস আগে মাদারীপুরে দু’গ্রুপে সংঘর্ষ বাধে আওয়ামী লীগ মূর্তি ভাঙ্গে। মাদারীপুরে মন্দির ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগ। সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সরকারীদলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রতিমা ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। ইত্যাদি ঘটনাবলী থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আসলে সংখ্যালঘুদের কারা ক্ষতি সাধন করে আর এ জন্যে সংশ্লিষ্টরা দোষ চাপায় কার ওপর। ইসলাম সংখ্যালঘুদের জানমালকে মুসলমানের জানমালের অনুরূপ বলে মন্তব্য করেছে এবং হাদীসে মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, আসওয়ালুহুম কা আসওয়ালিকুম- তাদের জানমালও তোমাদের জানমালের মতো সুতরাং কেউ সংখ্যালঘুদের জানমালের ক্ষতি সাধন করবে না। সুতরাং যে বা যারাই আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের জানমালের ক্ষতি সাধন করবে তা মহানবী (সাঃ)-এর রোষানলে পড়বে এবং ইসলামী বিধান অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হবে। পরিতাপের বিষয় যে একশ্রেণীর লোক না বুঝেই ইসলাম ও মুসলমানদের এ ব্যাপারে দুর্নাম করে থাকে। মূলত সুবিধাবাদী এক শ্রেণীর লোকই এরূপ আচরণ করে থাকে যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কঠোর ব্যবস্থা গৃহীত হওয়া উচিত। মোটকথা আমরা এ জাতীয় ঘটনাবলীর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে বা যারাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।