টঙ্গীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হামলায় এক স্কুলছাত্র নিহত ও আরো ৫ জন আহত হয়েছে। নিহতের নাম জাহিদ হাসান শ্রাবণ (১৪)। সে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। হামলাকারীরা সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল মণ্ডল গ্রুপের সন্ত্রাসী ও স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
হতাহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, রোববার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় জাহিদ হাসান শ্রাবণ অবসর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে যায়। সন্ধ্যা ৭টায় মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় গাছা থানা রাসেল স্মৃতি সংসদের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী জাহিদ হাসান মায়া মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তুচ্ছ ঘটনায় তার সঙ্গে শ্রাবণের বন্ধু খেলোয়াড়দের কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান মায়া ও তার সহযোগী নাহিদ, জাহিদ, তপু, জাকির, শামীম, আলামিন, উজ্জ্বল ও শাওনসহ ১৫-২০ জনের একটি দল খেলার মাঠে অতর্কিতে হামলা চালায়।
তাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে জাহিদ হাসান শ্রাবণ ও তার বন্ধুরা পাশের বাড়িতে ঢুকে একটি ঘরে আশ্রয় নেয়। ছাত্রলীগ নেতা মায়া, নাহিদ, তপু ও জাহিদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ওই বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তাদের হামলায় শ্রাবণ ও তার বন্ধু ইমরান (১৪), মাসুদ রানা (১৪), মাসুদ রানার মা মাসুদা বেগম (৫০) ও দাদি রেহেনা (৭০) আহত হন। সন্ত্রাসীরা মাসুদ রানাদের ঘরে ঢুকে সেখানে আশ্রয় নেয়া শ্রাবণকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালিয়ে চলে যাওয়ার পর আশপাশের বাড়ির লোকজন আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে সন্ত্রাসীরা আবারো দলবল নিয়ে রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে হাসপাতালে যেতে বাধা দেয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অবরুদ্ধ রাস্তায় শ্রাবণের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে সন্ত্রাসীরা বেরিকেড তুলে নেয় এবং রোববার রাতেই আহত ইমরানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অন্য আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। শঙ্কামুক্ত না হওয়ায় আহত ইমরানকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান। রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী জিএমপির গাছা থানার এসআই জিন্নাহ জানান, হতাহতরা ৭ম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাশের চান্দরা রহমানিয়া মাদরাসার নৈশপ্রহরি সরু মোল্লাকে আটক করা হয়েছে। আটক সরু মোল্লা ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা নাহিদের নানা বলে জানা গেছে।
নিহত জাহিদ হাসান শ্রাবণের বাবা সাইদুল ইসলাম একজন সাধারণ কৃষক। তার দুই ছেলের মধ্যে নিহত শ্রাবণ বড়। ময়না তদন্ত শেষে সোমবার বিকালে নিহত শ্রাবণের লাশ বাড়িতে নেয়া হলে সেখানে স্বজনদের কান্নার রুল পড়ে যায়। শ্রাবণের মা শমতাজ বেগম বুক ফাটা কান্নায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এ সময় এলাকার শত শত মানুষ বাড়িতে ভিড় জমায়। সাংবাদিকদের দেখে শমতাজ বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার বাবারে যারা নৃশংসভাবে কুপাইয়া কুপাইয়া মারছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।’ এদিকে গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল।