জামশেদ মেহেদী
দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং সরকার হিসেবে আওয়ামী সরকার ইসলাম বিরোধী এবং ‘ধর্মদ্রোহী’ এই রকম ঢালাও মন্তব্য আমরা করব না। তবে এ কথা অবশ্যই বলব যে, দেশে বিশেষ করে রাজধানীসহ বিশেষ কিছু বিভাগীয় শহরে বর্তমানে যে লড়াই শুরু হয়েছে সেটি হলো দুটি পক্ষের লড়াই। এক পক্ষে ইসলামকে হেফাজত করার শক্তি এবং অপর পক্ষে রয়েছে ইসলামকে নিন্দিত ও অপমানিত করার পক্ষ শক্তি। এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ইসলামকে ধিকৃত ও নিন্দিত করার পক্ষ শক্তিতে যোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী সরকার। তারা শুধু ইসলাম বিরোধী শক্তির পক্ষেই যোগ দেয়নি, বরং তারা ইসলাম বিরোধী শক্তির প্রধান অবলম্বন ও শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এতদিন পর্যন্ত আওয়ামী সরকার ইসলাম বিরোধিতা করত প্রছন্নভাবে এবং ইসলাম বিরোধী শক্তিকে মদত যোগাত চাতুর্যের সাথে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে বিশেষ করে শাহবাগীদের নর্তন-কুর্দনের পর থেকেই ইসলাম বিরোধিতায় আওয়ামী লীগ সামনের কাতারে চলে এসেছে এবং ইসলাম বিরোধী ছোট বড় দলগুলোর সর্দার হিসেবে আর্বিভুত হয়েছে।
আ’লীগের ধর্মদ্রোহীতার কয়েকটি উদাহরণ
বিগত শত শত বছর ধরে রাসূলুল্লাহ-কে অপব্যাখ্যা করার দুঃসাহস কারো হয়নি। কিন্তু এবার শেখ হাসিনার এই আওয়ামী জামানায় সেই ধৃষ্টতা করেছেন দুইজন জাতীয় সংসদ সদস্য। এদের একজন হলেন জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল। সারা জীবন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বুলি কপচিয়ে জীবনের প্রান্ত সীমায় একজন এমপি হওয়ার লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। তাই আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে তিনি এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নুন খেয়ে এখন তিনি নিমক হালালি করতে ব্যস্ত হয়েছেন। এই অপবিত্র কাজটি করতে তিনি জাতীয় সংসদের পবিত্র ফোরটির অপব্যাবহার করেছেন। সেখানে তিনি ফতোয়া দিয়েছেন যে মদিনায় রাসূলুল্লাহ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদিনা সনদ প্রণয়ন করেন। দৈনিক ‘নয়া দিগন্তে’ প্রকাশিত খবর মোতাবেক এই জাসদ নেতা বলেন যে, যারা মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে মুহম্মদ (সা.) নাকি মদিনা থেকে চলে যেতে বলেন। মুহম্মদ (সা.)-এর উম্মাহর বিরোধিতা করার জন্য বনি কোরায়যা গোত্রের ৬০০ লোকের কল্লা কেটে দেয়া হয়েছিল। অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী জাসদের এই সংসদ সদস্য বলেন যে বনি কোরায়যার ৬০০ লোকের কল্লা যদি কাটা যেতে পারে, তাহলে বাঙালি উম্মতের বিরোধিতাকারীদের বিচার করা যাবে না কেনো।
ইসলামের অপব্যাখ্যা দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদের ফোরের অপব্যবহার করেন আরেক সংসদ সদস্য। তাঁর নাম নাসিম ওসমান। তিনি নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসীদের গড ফাদার বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই। তিনি ফতোয়া দেন যে মুহম্মদ (সা.) নাকি ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণ করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নাসিম ওসমান আগ বাড়িয়ে বলেন যে ব্লগার রাজীব নাস্তিক ছিলেন না। এই জন্য তারা রাজীবের সমর্থক। (নয়া দিগন্ত ৫ মার্চ ২০১৩)।
অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করি
সেই স্কুল জীবনে পড়েছিলাম ‘ অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করি কথায় কথায় ডিকশনারি’। এই পরিণত বয়সে দেখছি এই কথাটি শতকরা ১০০ ভাগ ফলে যাচ্ছে এই দুই জাতীয় সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে। কথায় আরো বলে যে, ‘যার কাজ তারই সাজে, অন্য লোকের লাঠি বাজে’। নাসিম ওসমান সাহেবকে করুণা করা ছাড়া আর কিই বা করতে পারি। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) যদি সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষই হবেন তাহলে তার ৪০ বছর বয়স থেকে ৬৩ বছর বয়স পর্যন্ত, অর্থাৎ তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ২৩ বছর ধরে পবিত্র ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস সংগ্রাম করে গেলেন কেন? কাদের বিরুদ্ধে ছিল এসব সংগ্রাম? এই বিষয় নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হতে রুচিতে বাধে। শেষ নবী সেক্যুলার ছিলেন কিনা সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করতে হলে সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, এছাড়াও মহানবীর জীবন সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশোনা থাকতে হবে। বোঝা যাচ্ছে যে এই দুটি বিষয় সম্পর্কে ঐ দুইজন এমপির কোনো রকম পড়াশোনা নাই। জীবনে ২৩টি বছর তিনি কাটালেন আল্লাহর বাণী প্রচার করতে, যে মহামানবকে ওরাই বললেন ধর্ম প্রচারক, তিনি ধর্মনিরপেক্ষ হন কিভাবে? সেক্যুলারিজম সম্পর্কে পশ্চিমা লেখকদের দুই চারটি বই পড়লেই কুরআন শরীফ বা হাদিস শরীফ সম্পর্কে মুন্সীয়ানা অর্জিত হয় না। ১১৪টি সূরা সম্পর্কে যদি তারা বুৎপত্তি অর্জন করতে পারেন তাহলে বাপ জন্মে আর মুহম্মদ (সা.) বা ইসলামকে ধর্মনিরপেক্ষ বলার মুর্খতা দেখাতে আসবেন না। কুরআন শরীফের ১১৪টি সূরা, তফসির এবং শানে নযুলসহ পড়লে তারা দেখতে পাবেন যে ইসলাম কোনো অবস্থাতেই ব্যক্তিগত বিষয় নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এই এতোগুলো সূরা এবং সহি হাদিস পড়লে এবং বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে ইসলামে রয়েছে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা, একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, একটি সামাজিক ব্যবস্থা এবং একটি পারিবারিক ব্যবস্থা। বাংলাদেশে ‘বাঙালি উম্মত’ বলে যে বিচারের কথা হলিউডি সোসালিস্ট বাদল বলেছেন তিনি আগে ঠিক করুন, বাঙালি উম্মত কারা। বাঙালি উম্মতের কথা তুললে সীমান্তের ঐ ধারে যারা আছে তারা কি বাদল সাহেবদের ভাষায় বাঙালিদের উম্মত নন? উম্মতে বাঙালির জন্য তার যদি এতোই দরদ হবে তাহলে সীমান্তের দু’ ধারে এরা পড়ে আছেন কেন? সীমান্ত রেখাটি মুছে দিয়ে ঐ ধারের বাবুরা বাদল সাহেবদের সাথে মিশে যাচ্ছেন না কেন? তবে বিস্মিত হতে হয় তখনি যখন দেখি যে রাসূলুল্লাহকে ধর্মনিরপেক্ষ বানানোর স্পর্ধিত উক্তির পরেও যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্পিক্টি নট’ হয়ে বসে থাকেন।
হালাল হারামের ফতোয়া
আওয়ামী সরকার দেশবাসীকে বিশেষ করে কিশোরদেরকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান দানের (!) এক মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই জন্য তারা মুসলমানদের ঈমান এবং আকিদা নিয়ে কোমলমতি শিশু ও কিশোরদের ব্রেন ওয়াশ শুরু করেছে। বিগত সোয়া চার বছর শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বসিয়ে রেখেছেন প্রাক্তন ছাত্র ইউনিয়নের এক কমিউনিস্টকে। এই ব্যক্তির আমলেই নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য একটি পাঠ্য বই নির্বাচন করা হয়েছে। আর সেই বইটির নাম ‘ইসলাম ও ‘নৈতিক শিক্ষা’। বইটির ৮২ নম্বর পৃষ্ঠায় হালাল হারাম অংশে হারাম বিষয়ের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। ঐ তালিকায় ৫ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে, ‘দেবদেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গীকৃত পশুর গোস্ত খাওয়া হারাম।’ এই ৫ নম্বর ক্রমিকের পর প্রশ্ন ওঠে, দেবদেবীর নামে যে পাঁঠা বলি দেয়া হয় সেই পাঁঠার গোস্ত খাওয়া কি মুসলমানদের জন্য হালাল? এখানে কি আল্লাহর সাথে দেবদেবীদেরকে এক শরীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই? (নাউজুবিল্লাহ)। এখানে কি দেব দেবীদেরকে আল্লাহর শরীক করা হয় নাই? (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ নাদানও জানে, খোদাতায়ালা হলেন ‘লা শরীকাল্লাহ’, অর্থাৎ আল্লাহর কোনো শরীক নাই। পবিত্র ইসলামে সবচেয়ে বড় গুনাহ্ বা পাপ হলো আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। সে কারণেই ইসলামে মূর্তিপূজা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মহানবীর আমলেরও অনেক আগে থেকে কাবাঘর হতে দেবদেবীর মূর্তি অপসারণ করা হয়। অথচ আওয়ামী আমলে কমিউনিস্ট শিক্ষা মন্ত্রীর পাঠ্য পুস্তকে ইসলামের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পাপ কার্যটি কিশোর ও তরুণদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সূরা বাকারার ১৭৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই তিনি মৃত (জন্তুর গোস্ত), সব ধরনের রক্ত ও শূকরের গোস্ত হারাম (ঘোষণা) করেছেন এবং (এমন সব জন্তুও হারাম করেছেন) যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে জবাই (কিংবা উৎসর্গ) করা হয়েছে।’ আলোচ্য পুস্তকের ৫ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত অংশটি সূরা বাকারার ১৭৩ নং আয়াতের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কুরআন শরীফের সাথে এই সংঘর্ষ কি কমিউনিস্ট শিক্ষা মন্ত্রী ইচ্ছা করে বাধিয়েছেন?
ধর্মদ্রোহীতার আরো কয়েকটি নজির
গত ৯ মার্চ আল্লামা শাহ আহমেদ শফি শাহবাগীদের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহীতার যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেন তার মধ্যে আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হলো,
১. গণজাগরণ মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, আরিফ জেবাতিক, নিঝুম মজুমদার ও রাজীব হায়দার শোভনসহ স্বঘোষিত নাস্তিকরা। নিজেদের (সামহয়্যারইন, মুক্তমনা, ধর্মকারী, নূরানী চাপাসমগ্র প্রভৃতি) ব্লগে আল্লাহ ও মুহম্মদ (সা.) তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকর লেখা ও জঘন্য মন্তব্য করে যাচ্ছে।
২. শাহবাগের মঞ্চ থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির কুশপুত্তলিকাকে সম্বোধন করে ‘তোকে বাঁচাতে এলে আল্লাহকেও ফাঁসি দেয়া হবে’ বলে- (নাউজুবিল্লাহ) প্রকাশ্যে আল্লাহদ্রোহীতার মহড়া দেয়া হচ্ছে।
৩. মুসলমানের ফরজ বিধান পর্দাকে কটাক্ষ করে ‘হোটেলের পতিতার’ পোশাক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
৪. অন্য দিকে শাহবাগ চত্বরের মঞ্চ থেকে ওলামা মাশায়েখদের জঙ্গি, মৌলবাদী ও জারজ সন্তান বলে গালি দেয়া হয়েছে।
শাহবাগ আন্দোলন কাদিয়ানি চক্রান্ত
আল্লামা শফি আরো বলেন, অনুসন্ধানে আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের নেপথ্যে কাদিয়ানিদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছি। একই মঞ্চে ঘাদানিক নেতা, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী শাহরিয়ার কবীর এবং আহমাদিয়া মুসলিম জামাতের (কাদিয়ানি) নায়েবে আমির আব্দুল আওয়াল খান পাশাপাশি বসে অনুষ্ঠান করেছে। তিনি বলেন, ইসলামের চরম শত্রু শাহরিয়ার কবীরের মতো মুশরিক ও মুরতাদরা একদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, আর অন্য দিকে কাদিয়ানিদের মতো মুরতাদ সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফি বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না’, এই মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে বর্তমান সরকার। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসেই আসল চেহারায় ফিরে গেছে তারা। সংবিধান সংশোধন করে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মুছে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থাপন করেছে। ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি, কুরআন সুন্নাহ বিরোধী নারী নীতি, বোরকা বিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি করেছে। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলী একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার পোশাক বোরকা নিয়ে কটূক্তি করে বলেছেন, ‘কুৎসিত মেয়েরা তাদের মুখ ঢাকতে বোরকা পরে। আপনাদের সন্তানদের বোরকা না পরিয়ে নাচ গান শেখাবেন, তাহলে তারা সংস্কৃতিমান হয়ে গড়ে উঠবে।’
আওয়ামী লীগের এই ধরনের ইসলাম বিরোধীতার ভূরি ভূরি নজির দেয়া যায়। তাদের ইসলাম বিরোধিতার কারণেই শুধু জামায়াত শিবির নয়, সমস্ত ইসলামী দল ও বিএনপি এবং সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। বর্তমানের চলমান শহুরে লড়াই এখন সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত দুটি শিবিরের লড়াই। এক দিকে রয়েছে ইসলামী মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা, অন্যদিকে রয়েছে ইসলাম বিরোধী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা। এই লড়াইয়ে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদীদের বিজয় ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।