সংখ্যালঘু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক স্পর্শকাতর বিষয়। ভোটের বাজারে সংখ্যালঘুরা একটা ভালো অংশ ধারন করে। তাই নির্বাচন আসলে সকল দলই তাদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা করে। কথিত আছে, সংখ্যালঘুরা আওয়ামীলীগের স্থায়ী ভোটব্যাংক। আর সংখ্যালঘুরাও নাকি আওয়ামীলীগেই নির্ভরতা খুঁজে পায়। অথচ এই মহাজোটের শাসনামলেই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতিত। অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দশ বছরে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হয়েছে প্রায় দুশটি। এর অধিকাংশ হামলাই হয়েছে সরকারের সরাসরি মদদে। আর এর বেশ কিছু ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ সরাসরি জড়িত। এমন কি কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের স¤পৃক্ততাও ধরা পড়ে। এসব ঘটনার পিছনে ছিলো মূলত জমি দখল, চাঁদা সংগ্রহ, নারী উত্যক্ত ইত্যাদি। এসব হামলায় ব্যাপক ভাংচুর, ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় সংখ্যালঘুরা। এরকম কিছু ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে সোমবার দুপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে পূজারীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী উপজেলার সৈয়দকাঠী গ্রামে ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তিতুমীর কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসানের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুনরায় সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মন্নান মৃধার নেতৃত্বে তিনটি মটরসাইকেল যোগে ৯/১০ জন লোক ওই পূজামণ্ডপে এসে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে মটরসাইকেলে করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।এ সময় চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে মটরসাইকেলসহ সাত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে মঙ্গলবার পূজা কমিটির সভাপতি উত্তম কুমার তাদেরকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মেহেদী হাসান, মিরাজ, শুভ্র, বদিউল, সজিব, মাসুদ ও হাফিজ। তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি উত্তম কুমার জানান, মান্নান মৃধার নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। এলাকাবাসীকে নিয়ে সাতজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঋষিপল্লির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত ও মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ করায় ৩০ জানুয়ারি ২০১৬, বিকেলে ২০ থেকে ২৫ জন লোক লাঠিসোঁটা ও লোহার রড নিয়ে ঋষিপল্লিতে হামলা চালায়। ঋষিপল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঋষিপল্লিতে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন পার্শ্ববর্তী বাহিরঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন ও আবু সাঈদ। আবু সাঈদ মনিরামপুরের দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এ ঘটনায় মনিরামপুর থানায় আবু সাইদ ও ইব্রাহিমসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ জানায়, আজ মোছা. জীবনী, আকবর ও অছির উদ্দিন নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আবু সাইদ ও ইব্রাহিমসহ বাকি আসামিরা পলাতক।এ ঘটনায় ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিং হয়। সেখানে যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান বলেন, এ হামলায় আবু সাইদ ও ইব্রাহিম নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। তাঁদের ধরে দিতে পারলে দশ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
অন্যদিকে ১১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে আলোচিত সাওতাল পল্লীতে হামলার নেপথ্যে ছিলেন গাইবান্ধার ওই এলাকার (গাইবান্ধা-৪) আওয়ামী লীগের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুল । এ সম্পর্কে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুলবুল বর্তমানে এম.পির ডান হাত। যার নিয়ন্ত্রণে এমপির ব্যক্তিগত অস্ত্র ভান্ডার রয়েছে! সাহেবগঞ্জ সাঁওতাল পল্লীতে হামলা চালানোর আগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে পল্লীর সবকয়টি বাড়িতে লুটপাট এবং কাউকে ছাড় না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলো এই বুলবুল।
স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় চেয়ারম্যান বুলবুলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সাহেবগঞ্জে আদিবাসী-বাঙালির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পল্লীতে ৬শ ঘর ও স্কুলে অগ্নিসংযোগ করে। এটি মোটেও আখ কাটতে গিয়ে বাধা দেয়ার ফলে সৃষ্ট কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়। পুলিশ প্রহরায় আখ কাটতে যাওয়ার কোন যুক্তি নেই। আদিবাসী-বাঙালিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। হামলায় প্রভাবশালীদের যোগসাজশ ছিলো জানিয়ে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই হামলায় পুলিশ ও সুগার মিলের ম্যানেজার আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বুলবুল ও তার মাস্তান বাহিনী মিলের শ্রমিকদের নাম ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে নিরস্ত্র আদাবাসী-বাঙালীদের উপর হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
ছাত্রলীগ তথা আওয়ামীলীগের এ ধরনের কাজের পিছনে মূলত দুটি উদ্দেশ্য থাকে। এক নিজেদের স্বার্থ হাসিল আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে চালিয়ে দেওয়া। এ যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি।