ইসলাম বিরোধীতা

বর্তমান মহাজোট সরকারের দশ বছরে চরমভাবে বিদ্বেষের শিকার হয় ইসলাম, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা দেয়ার পর তা ভঙ্গ করে সরকার একের পর ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এতে হতবাক হয়ে যায় মানুষ। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা বাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু, বোরকাবিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য, আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন মহলের কটূক্তি, আলেমদের নির্যাতন, দাড়ি-টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, জেহাদি বইয়ের নামে অপপ্রচার, ইসলামী রাজনীতি দমন ও মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ সরকারের ব্যাপক ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। বর্তমান সরকার ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়ে ক্ষমতায় এসে পরিকল্পিতভাবে ইসলামবিরোধী এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে ইসলামী দলের নেতারা মন্তব্য করেছেন।

ইসলামবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন :

শুধু ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডই নয়, সরকার একের পর এক কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেশকিছু আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও গত তিন বছরে সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর, বোরকাবিরোধী তত্পরতা ও পরিপত্র জারি, সংশোধনীর নামে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসে সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব আইন করছে।

সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মাথায় মরহুম অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, শুরু থেকেই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন। পরবর্তীতে ওই কমিটির ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির যে রিপোর্ট দেয়—তা প্রত্যাখ্যান করে সেটি সংশোধন বা বাতিলের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এসব দাবি ও আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ওই বছর ২৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের ডাক দিলে সরকার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তা স্থগিত করা হয়। কিন্তু সে দাবি আর বাস্তবায়ন করেনি সরকার।

‘নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজে বোরকা পরে আসতে মানা’ শিরোনামে ২২ আগস্ট একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং এ সম্পর্কে কোর্টের তত্পরতার পর সরকারও উদ্যোগী হয়। বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পরিপত্র জারি করা হয়। বাংলাদেশে অনেকগুলো মাদ্রাসা ও স্কুলের নির্ধারিত ড্রেসই হচ্ছে বোরকা। সেসব মাদ্রাসা স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সরকার গত বছরের ৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতির খসড়া অনুমোদন করে। এটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য ব্যাপক আন্দোলন, এমনকি হরতাল পালিত হলেও এখনও পর্যন্ত সরকার অনড় অবস্থানে রয়েছে। এদিকে গত বছরের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন করা হয়। শুধু তাই নয়, এতে বিসমিল্লাহর বিকৃত অনুবাদ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া সংবিধান থেকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন সংক্রান্ত ধারা বাদ দেয়া হয়েছে।

সবকিছুর কর্তৃত্ব আল্লাহর এবং সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর গঠনতন্ত্রে এমন কথা থাকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে সকল ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধের জন্য একের পর এক হুমকি ও আইন পাশ ও সংবিধান সংশোধন করেছে সরকার।

সরকারি কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য :

গত তিন বছরে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের লাগামহীন ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত বক্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গত বছর অক্টোবরে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন—‘এবার গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে।’ একই বছর ১৩ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন—‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।’ আর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন—‘সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলা হবে।’ ২০০৯ সালে পৃথক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ বলেন, বোরকার ব্যবহার ৫০০% বেড়ে গেছে, সেনাবাহিনীতে মাদ্রাসার ছেলেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দেশ থেকে বোরকা তুলে ফেলতে চাই। সেনাবাহিনী থেকে ইসলামপন্থীদের বিতাড়িত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু প্রধানমন্ত্রী চাই।

২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, ‘কওমী মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমী মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমী মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপমণ্ডূকতার সৃষ্টি করছে। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাত্ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।’ একই বছর পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা।’ রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো কওমী মাদরাসাগুলো গজিয়ে উঠেছে।’ গত ১০ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’

মন্ত্রীদের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজালের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যও ছিল আলোচনার বিষয়। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে (!)। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়।’ গত বছর ১০ ডিসেম্বর ইমামদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা ইহুদিদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’ এর ক’দিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘জিহাদ বিদায় করতে হবে।’ ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। এছাড়া মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়।

সাবেক পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা। তিনি আরো বলেন, টাকা ইনকামের জন্য আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ হজ্বে প্রবর্তন করেন। তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, রাসুল(সাঃ)কে কটুক্তি করা স্বাভাবিক বিষয়,এটানিয়ে হৈচৈ করা ঠিক নয়। জাসদের আরেক নেতা মাইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন! আওয়ামী নেতা হাসান মাহমুদ বলেন, মেয়েদেরকে বোরকার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে,তাদের নাচগান শিক্ষা দিতে হবে।  ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, কুৎসিত চেহারা ঢাকতেই মেয়েরা বোরকা পরে।

আল্লাহ, রাসুল ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি :

গত তিন বছর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহল থেকে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে অসংখ্য কটূক্তি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবিতে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও সরকার তাদের শাস্তির পরিবর্তে অনেককে পুরস্কৃত করেছে। ২০১০ সালের ১ আগস্ট বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেবনারায়ণ মহেশ্বর পবিত্র কোরআন শরিফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। রিট আবেদনে তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর বড় ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে আয়াত পবিত্র কোরআন শরিফে রয়েছে, তা সঠিক নয়। তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর ছোট ছেলে হজরত ইসহাককে (আ.) কোরবানি করতে নিয়ে যান। এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ও কোরআনের আয়াত শুদ্ধ করার জন্য দেবনারায়ণ মহেশ্বর আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন। আদালত রিট খারিজ করে দেয়ার পর দেবনারায়ণের এ চরম হঠকারি ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দেবনারায়ণকে পুলিশের পাহারায় এজলাস থেকে বের করে তাদের ভ্যানে প্রটেকশন দিয়ে আদালত এলাকার বাইরে নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যায়।

২০১১ সালে ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পিতৃভূমি টুঙ্গিপাড়ার জিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস দশম শ্রেণীর ক্লাসে দাড়ি রাখা নিয়ে সমালোচনাকালে হজরত মোহাম্মদকে (সা.) ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেন। এতে ওই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে শঙ্কর বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া থেকে পালিয়ে যায়। একই বছর ২৬ জুলাই ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তি করেন। সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে এক সভায় তিনি মন্তব্য করেন, ‘এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মুহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানদের মুহাম্মদের হজ করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িতে গিয়ে হজ করলেই তো হয়।’ এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সরকার তাকে অন্যত্র বদলি করে শাস্তির আড়ালে পদোন্নতি দেয়।

একইভাবে মানিকগঞ্জে বিশ্বজিত মজুমদার কর্তৃক রাসুল (সা.) এর জন্ম এবং পবিত্র কোরআন নিয়ে কটূক্তি, বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিব লিঙ্গের সঙ্গে তুলনা, খুলনার পাইকগাছায় আরেক হিন্দু মহান আল্লাহ সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাইস্কুল গেটের কোরআনের আয়াত সংবলিত সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা, বাগেরহাটের কচুয়ায় এক হিন্দু কর্তৃক মহান আল্লাহর ছবি ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্কন করা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রাসুল (সা.) সম্পর্কে হিন্দু কর্তৃক চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক হিন্দুর (সা.) প্রতি কটূক্তিসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের ইসলামবিরোধী বক্তব্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম ঘটনা অনেক।

২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের সময় দেশের গুটিকয়েক নাস্তিক বিভিন্ন ব্লগে আল্লাহ, মুহাম্মদ সা., ও ইসলাম এমনসব কুৎসিত ও অশ্লীল কথা বলেছে যে তা কোনভাবেই মুদ্রনযোগ্য নয়। এসব নাস্তিক ব্লগারদের সরকার দিনের পর দিন শাহবাগে পুলিশ প্রোটেকশনে তাদের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ করার সুযোগ করে দিয়েছে। খাবার, পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে তাদের যখন হেফাযতে ইসলাম আন্দোলন শুরু করেছে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। হেফাযতে ইসলামে সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অগণিত মুসল্লিকে খুন করা হয়েছে।

হেফাযত ইসলামের কর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে শত শত মামলা হয়েছে। অথচ অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যারা কটুক্তি করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি তো দূরের কথা তাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড :

দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গত তিন বছরে ব্যাপক দুর্নীতি, ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সর্ব মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও জজ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে শামীম মোহাম্মদ আফজাল নিয়োগ পাওয়ার পরপরই শীর্ষ আলেমরা তাকে একজন প্রতিষ্ঠিত মাজারপন্থি ও কবর পূজারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার পর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি অবশ্য একথার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের একাধিক পীরের ঘনিষ্ঠ মুরিদ দাবিদার শামীম মোহাম্মদ আফজাল তার ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এরই মধ্যে বিদ’আতি মাজার-খানকাপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। এসব জায়গায় হাক্কানি আলেম-ওলামাদের দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলাম ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতেই ইসলামী চিন্তা-চেতনা বিরোধী এই ডিজিকে আওয়ামী লীগ সরকার নিয়োগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী।

২০১০ সালে রমজানে সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে ইফার উদ্যোগে তাদের পছন্দের আলেমদের নিয়ে ১০০ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হলে সারাদেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে ফিতরার সর্বনিম্ন ১০০ টাকার স্থলে ৪৫ টাকা নির্ধারণে বাধ্য হয় তারা। দীর্ঘদিন ধরে হামদ, নাত ও ইসলামী সঙ্গীত তথা ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। এখন এসব সংস্কৃতির বদলে অশ্লীল নাচ-গানের আসরের আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে করমর্দনও করেন ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজাল। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার একতারা এবং শরীর দুলিয়ে নাচ-গানে বিব্রত অবস্থায় পড়েন উপস্থিত ইমামরা। এছাড়া ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে জাতীয় শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে হামদ ও নাতের বিচারক হিসেবে এমন শিল্পীদের আনা হয় যাদের অনেকেই ইসলামি সঙ্গীতের ধারার সঙ্গে পরিচিত নয়। এ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

একইবছর ২৭ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা। ওইদিন আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ডিজির অনুরোধে ইমামদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণীরা পরিবেশন করে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য। অবশ্য এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায় ব্যালে ড্যান্স নয় ৩৫ সেকেন্ডের ‘সুয়িং ড্যান্স’ পরিবেশন করা হয়। গত বছর ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে ফাউন্ডেশনের পরিচালক হালিম হোসেন খান অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে জনতার হাতে আটকের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় ও তাকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ তেমন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

২০১০ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের বিতর্কিত খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন কর্তৃক জাতীয় ঈদগায় ঈদুল ফিতরের নামাজে ভুল করা নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

জঙ্গিবাদী জিহাদি বই নিয়ে অপপ্রচার ও নির্যাতন :

বর্তমান সরকারের তিন বছরে আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দমনে ব্যাপকভাবে ‘জঙ্গি ও জিহাদি বই’ বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী, বিরোধী মতকে দমন বা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এটি। পুলিশ যখন যাকে ইচ্ছা জিহাদি বই পাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে। এ সময় বিভিন্ন ইসলামী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। পুলিশ জিহাদি বই উদ্বারের নামে যেসব পুস্তক আটক করে এর কোনোটিই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়। এমনকি কুরআন হাদীসকে জঙ্গী বই আখ্যা দিয়ে মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত দশ বছরে নারী, শিশু-কিশোরসহ হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার ও হয়রানী করা হয়েছে শুধুমাত্র ঘরে ইসলামী বই, কুরআন ও হাদীস রাখার অপরাধে।

আলেমদের গ্রেফতার নির্যাতন :

গত তিন বছরে দেশকে অনৈসলামিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার আলেম-উলামাদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিষ্ক্রীয় এবং ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা চালায়। সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আলেমরা যাতে মাঠে নামতে না পারেন সে জন্যই নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৯ সালের মে মাসে মিথ্যা একটি মামলায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আন্দোলনের মুখে তাকে ছেড়ে দেয় সরকার। এরপরও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়নসহ সরকারের বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গত বছরের ৪ এপ্রিল মুফতি আমিনীর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালনের পর ষড়যন্ত্রের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছুদিনের মাথায় তার ছেলে অপহরণ, তাকে গৃহবন্দি এবং ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রাখা হয়েছে।

৫মে ২০১৩ সালে হেফাযতে ইসলাম নাস্তিকদের শাস্তির দাবীতে মহাসমাবেশ করে। সেই সমাবেশে নজিরবিহীন গণহত্যা চালিয়েছে সরকার। সব লাশ গুম করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কতজন মানুষ সেই ঘটনায় নিহত তার কোন পরিসংখ্যান জানা যায় নি। হেফাযতে ইসলামের মহাসচিব বাবুনগরীসহ শত শত আলেমকে গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। অনেককে রিমান্ডে গুলি করা হয়েছে। এর বিপরীতে নাস্তিকদের দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মান। আলেমদের নির্যাতনের ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান। দেশে দাঁড়ি, টুপি ও ইসলামী পোষাক পরিধান করাই এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের বহু স্থানে তাফসীর মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাফসীর মাহফিল থেকে আলেমদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয়েছে।

ইসলামী রাজনীতি দমন :

আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসেই ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে এই নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার শুরুতে অনেক মন্ত্রী-এমপি ঘোষণা দেন। সরকারের এই মনোভাবে আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে তত্পর হয়ে ওঠে ইসলামী সংগঠনগুলো। এক পর্যায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসে সরকার। কিন্তু কৌশলে ধর্মীয় দলগুলোকে দমনের পথ বেছে নেয় তারা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যে সরকারের আল্লাহর ওপর আস্থা নেই, দুর্গার ওপর আস্থা থাকে তাদের আর কিছু বাকি থাকে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনকে খতম করার জন্য প্রতিবেশী দেশের ইঙ্গিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ৪০ বছরের মীমাংসিত ইস্যু এনে গায়ের জোরে রায় দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, বৃহত্ ইসলামী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংসের উদ্যোগ নেয় সরকার।

গত দশ বছরে জামায়াতে ইসলামীর ৫জন শীর্ষ নেতাকে মিথ্যে অপবাদে ফাঁসী দেয়া হয়। এর প্রতিবাদ করতে গেলে দেশে কয়েক শত মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে সরকার। কুরআনের পাখি মজলুম মাওলানা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী সাহেবের মৃত্যুদন্ডের আদেশ হলে ইসলামপন্থী মানুষরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। এই অপরাধে দুইদিনে হত্যা করা হয় প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে।

মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্র :

গত তিন বছর ধরে মাদরাসা ও এর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চলেছে নানা ষড়যন্ত্র। সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত নতুন ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় ও ইসলামী শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। আধুনিকায়নের নামে মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে করা হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত প্রথা বাদ দিয়ে অযৌক্তিক শর্তারোপের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে।

ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, এ সরকার ইসলাম ধ্বংসে যত কাজ করার দরকার তার সবই অবলম্বন করছে। শেখ হাসিনার সরকার বাদশাহ আকবরের মতো দ্বীনে এলাহী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। তার কাছে মুসলামানদের কোনো দাম নেই, রবীন্দ্রনাথ ও নাস্তিক-মুরতাদদের দাম রয়েছে। আসলে এ সরকার ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে এবং সেই কাজ করছে। তাই এ সরকারের পতন ছাড়া এ দেশে ইসলাম রক্ষার আর কোনো পথ খোলা নেই। খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। গোড়া থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। ইসলামের কথা শুনলেই তাদের মাথাব্যথা হয়। তাদের সময় দেব নারায়ণদের মতো ইসলাম বিদ্বেষীরা উত্সাহিত হয়।

ইসলামী চেতনা বিবর্জিত শিক্ষানীতি চালু:

আওয়ামী সরকার ইসলামী চেতনা নষ্ট করে এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সেক্যুলার করে গড়ে তোলার জন্য জগাখিচুড়ী শিক্ষানীতি চালু করেছে। তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা স্কুলে মাধ্যমিকে ‘ইসলাম ধর্ম শিক্ষা’কে ঐচ্ছিক করেছে।  প্রথম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে ‘মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসা’ গল্পটি বাদ দেয়া হয়েছে।  দ্বিতীয় শ্রেণীর বই থেকে ‘সবাই মিলে করি কাজ’ (খন্দক যুদ্ধের ঘটনা) গল্পটি বাদ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীর বই থেকে ‘তুলি দুই হাত করি মোনাজাত’ ও ‘হযরত আবু বকর’ কবিতা ও প্রবন্ধটি তুলে দেয়া হয়েছে। চুতর্থ শ্রেণীর বই থেকে ‘হযরত উমর (রা)’র জীবনী সংক্রান্ত প্রবন্ধটি বাদ দেয়া এবং পঞ্চম শ্রেণীর বই থেকে ‘বিদায় হজ্ব’ প্রবন্ধটি বাদ দেয়া হয়েছে।

মাদরাসা বোর্ডের নবম-দশম শ্রেণীর বই এ আল্লাহর সন্তান আছে বলে উল্লেখ করা হয়। (বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল নবম-দশম শ্রেণীর ‘বাংলা সাহিত্যের’ ১৯ নম্বর গদ্যাংশের ৯৪ নম্বর পৃষ্ঠায় মোহাম্মদ আকরম খাঁ রচিত ‘বিদায় হজ্ব অধ্যায়ে’ ‘অসাম্যের প্রতিবাদ’ প্যারার ৯৬ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় লাইনে ‘আল্লাহর সব সন্তানকে’ (নাউজুবিল্লাহ) লেখা হয়েছে ‘কুলপতি হযরত এব্রাহিম এই সহানুভূতি শিক্ষা ও সাম্যের শিক্ষাদানের জন্যই ‘ইতর-ভদ্র’ নির্বিশেষে ‘আল্লাহর সব সন্তানকে’ আরাফাত ময়দানে সমবেত হইবার জন্য আহ্বান করিয়াছিলেন।’ আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা সম্পূর্ণ শিরক। অথচ মাদ্রাসার বইতে শিরকি কথাবার্তা সংযোজন করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের মাধ্যমে ভয়াবহ শিরক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ২০১৩ সাল থেকে নবম-দশম শ্রেণীর জন্য পাঠ্য ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের পাঠ ২৪-এর একটি বিষয় হলো ‘শরীয়তের আহকাম সংক্রান্ত পরিভাষা’। পরিভাষার অধীনে একটি বিষয় হলো ‘হালাল-হারামের সংখ্যা’। হারাম-হালালের সংখ্যা বিষয়ে ৮২ পৃষ্ঠায় ১৭ ধরনের হারাম বস্তুর তালিকা দেয়া হয়েছে। তালিকার ৫ নম্বর ক্রমিকে লেখা হয়েছে ‘দেব-দেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম’। এখানে দেব-দেবীর নামে পশু উৎসর্গ করা না হলে সে পশুর গোশত খাওয়া হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মানে হলো দেব-দেবীর নামে কোনো পশু উৎসর্গ করা হলে তার গোশত খাওযা হালাল! একই সাথে এখানে দেব-দেবীকে আল্লাহর সমকক্ষ করা হয়েছে!

ইসলাম বিরোধীতা

ইসলাম বিরোধীতা

ইসলাম বিরোধীতা

এবার গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে
‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা।
সেনাবাহিনী থেকে ইসলামপন্থীদের বিতাড়িত করতে হবে

ইসলাম বিরোধীতা

ইসলাম বিরোধীতা

ইসলাম বিরোধীতা